বিআরটিসির সাড়ে ১০ কোটি টাকা চালক হেলপারের পকেটে

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন-বিআরটিসির সরকারি রাজস্বের ১০ কোটি ৩৩ লাখ ৫২ হাজার ৬৬৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির বাস-ট্রাকের ড্রাইভার ও কন্ডাক্টররা এ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানা গেছে। বিআরটিসির চেয়ারম্যান হিসাবে মো. মিজানুর রহমান দায়িত্ব নেয়ার পর আত্মসাতকৃত টাকা উদ্ধারে
তৎপরতা শুরু করেন। ডিপোগুলো থেকে হিসাব চাওয়ার পর এই তথ্য উঠে আসে। বিআরটিসির গাড়ি চালিয়ে নিয়মিত সরকারি রাজস্ব জমা দেয়ার কথা। কিন্তু এ নিয়ম অমান্য করে সারা দেশের বিভিন্ন ডিপোর অসংখ্য ড্রাইভার-কন্ডাক্টর বছরের পর বছর বিআরটিসির গাড়ি চালিয়ে সরকারি রাজস্ব জমা দেননি। কেউ কেউ আংশিক জমা দিলেও বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বছরের পর বছর টাকা বকেয়া থাকলেও তা আদায় করতে ব্যর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ডিপো ম্যানেজাররা এসব অর্থ আত্মসাৎকারী ড্রাইভার-কন্ডাক্টরদের কাছে অসহায়। বর্তমান চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর সকল ডিপোতে আদায় না হওয়া রাজস্বের হিসাব চেয়ে চিঠি দেয়ার পর গত ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশের বিআরটিসির ডিপোগুলো থেকে লিখিতভাবে হিসাব জানানো হয় প্রধান কার্যালয়কে। এরপর থেকে নিয়মিত বিভিন্ন ডিপো থেকে বকেয়া টাকার হিসাব পাঠানো হচ্ছে। সর্বশেষ হিসাব থেকে দেখা যায়, গত মে মাস পর্যন্ত দ্বিতল বাস ডিপোর বিভিন্ন ড্রাইভার-কন্ডাক্টরের কাছে ১ কোটি ৭ লাখ ৩৬ হাজার ১৬৪ টাকা বাকি রয়েছে। একই ভাবে কল্যাণপুর বাস ডিপোর কাছে বাকি রয়েছে ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ৪৫ টাকা। মতিঝিল বাস ডিপোর কাছে বাকি ১ কোটি ৪৬ লাখ ৬৫ হাজার ৯২০ টাকা, মোহাম্মদপুর বাস ডিপোর কাছে ৪ লাখ ৮১ হাজার ৪০০ টাকা, নারায়ণগঞ্জ বাস ডিপোর কাছে ১৬ লাখ ২ হাজার ৯৯২ টাকা, গাজীপুর বাস ডিপোর কাছে ২৮ লাখ ৮ হাজার ৬৬৯ টাকা, নরসিংদী বাস ডিপোর কাছে ৪৮ লাখ ৭১ হাজার ২৩২ টাকা, চট্টগ্রাম বাস ডিপোর কাছে ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬৫ টাকা, কুমিল্লা বাস ডিপোর কাছে ২৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা, বরিশাল বাস ডিপোর কাছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৮৫০ টাকা, খুলনা বাস ডিপোর কাছে ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৫৯৫ টাকা, বগুড়া বাস ডিপোর কাছে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৮৪ হাজার ৮১৫ টাকা, রংপুর বাস ডিপোর কাছে ১ কোটি ৮ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা, পাবনা বাস ডিপোর কাছে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৭৪৭ টাকা, সিলেট বাস ডিপোর কাছে ১ কোটি ২৬ লাখ ১১ হাজার ৯২৫ টাকা, সোনাপুর বাস ডিপোর কাছে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার ২৪৬ টাকা এবং দিনাজপুর বাস ডিপোর কাছে টাকা বাকি রয়েছে ২২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। সারা দেশের এসব বাস ডিপোর ড্রাইভার-কন্ডাক্টররা প্রতিষ্ঠানটির সর্বমোট ১০ কোটি ৩৩ লাখ ৫২ হাজার ৬৬৫ টাকার রাজস্ব আত্মসাৎ করেছে।
তবে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এটিকে আত্মসাৎ বলতে নারাজ। বিআরটিসির ডিজিএম (অপারেশন) রফিকুল ইসলাম তালুকদার মানবজমিনকে বলেন, বিভিন্ন ডিপোতে ড্রাইভার-কন্ডাক্টরদের কাছে অনাদায়ী বা বকেয়া টাকা রয়েছে। এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের টাকা মেরে দিয়ে পার পাওয়া যায় না। কোনো না কোনো ভাবে তা আদায় করে নেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি বছরে আয় করে ২০০ কোটি টাকা। সেখানে যে টাকা বকেয়া থাকে সেটা ২ শতাংশের বেশি না। ১৯৬৫ সালে বিআরটিসির জন্মের পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অল্প অল্প করে জমতে জমতে এই টাকা বকেয়া হয়েছে। এটা এক বছর বা ১০ বছরে হয়নি। তবে আশার কথা হলো এই টাকা সব সময় আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। অধিকাংশ আদায়ও হচ্ছে। এরপরও যেগুলো বাকি থাকবে সেগুলো সংশ্লিষ্ট ড্রাইভার-কন্ডাক্টর অবসরে গেলে পাওনা টাকা কেটে রেখে বাকিটা দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, ড্রাইভার-কন্ডাক্টররা গাড়ি চালিয়ে সরকারি রাজস্ব নিয়মিত জমা দেন। এরপরও বিভিন্ন ডিপোতে কিছু অনাদায়ী টাকা থেকে গেছে। সেগুলো আদায়ের জন্য তৎপরতা শুরু করা হয়েছে। এটি একটি কন্টিনিউ প্রসেস। সর্বশেষ যে হিসাব করা হয়েছে তার থেকে বর্তমানের পাওনা টাকার পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। তবে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার ক্ষমতা কারো নেই। আমরা সব টাকা আদায় করতে সক্ষমহবো।

Check Also

বিদেশে নয় দেশের মাটিতেই বিয়ের পরিকল্পনা রকুল-জ্যাকির

সংবাদবিডি ডেস্ক ঃ রকুল প্রীত সিং ও জ্যাকি ভাগনানির বিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি। বিয়ের প্রস্তুতি এখন …