জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় যমুনা-ব্রহ্মপুত্র চরাঞ্চলে টেকসই পরিকল্পনার তাগিদ

বিশেষ প্রতিনিধি :

জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা এবং দুর্যোগ ঝুঁকি কমাতে যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে টেকসই পরিকল্পনার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। উত্তরাঞ্চলে চর জনপদ এবং নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের জীবন-মান উন্নয়নে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত ও দীর্ঘ মেয়াদী উদ্যোগের আহবানও জানান তারা। “বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা অঞ্চলে ‘চ্যালেঞ্জ, উদ্ভাবন ও কর্মপরিকল্পনা’ নিয়ে বুধবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীতে ফ্রেন্ডশিপ আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় এসব তাগিদ দেন বক্তারা।

গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান। আর্থ-সামজিক অবস্থা, ইকোলজি এবং স্বাস্থ্যগত দিক তুলে ধরার মাধ্যমে চরবাসীর ভাগ্যউন্নয়নে দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সহযোগি সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ তিনি। উত্তরাঞ্চলে চর জনপদের জীবন-জীবিকা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন সামাজিক সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের প্রতিষ্ঠা নির্বাহী পরিচালক রুনা খান। তিনি বলেন, “নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়ে, কাংখিত উন্নয়ন এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত যমুনা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মানুষ। তাদেরকে দেশের উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত করতে ২০০২ সাল থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফ্রেন্ডশিপ।

এর অংশ হিসেবে স্থানীয় সরকারের সাথে সমন্বয় করে দুর্যোগ মোকাবেলায় দক্ষতা ও সচেতনতা বাড়ানো, প্রশিক্ষণ এবং স্থাপনা নির্মান করেছে সংস্থটি।” যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে নিজের অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক নদী গবেষণা সংস্থা ‘ইনিশিয়েটিভস ফর দ্যা ফিউচার অব গ্রেট রিভার্স- আইএফজিআর’ (IFGR- Initiatives for the Future of Great Rivers) এর চেয়ারম্যান এরিক অরসেনা। তিনি জানান, বিশ্বের অন্যান্য ব-দ্বীপ সমভূমির তুলনায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক অবস্থায় অনেকটা পিছিয়ে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র চরের বাসিন্দারা। বিশেষ করে, বন্যা, নদী ভাঙ্গন, খরা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টির মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাদের। জলবায়ু ঝুঁকি এবং দুর্যোগ কবলিত এলাকায় ফ্রেন্ডশিপের সফলতা ও কর্মকান্ড তুলে ধরেন সংস্থার জেষ্ঠ্য পরিচালক কাজী এমদাদুল হক। তিনি জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে ফ্রেন্ডশিপ। যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে তৈরি করা হয়েছে ২১টি বিশেষ বসতি ‘প্লিন্থ’। একটি পুকুরকে ঘিরে তৈরি ওভাল বা ডিম্বাকৃতির বসতি দুর্যোগের সময় ব্যবহৃত হয় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে। প্রতিটি প্লিন্থে আছে ১টি স্কুল, ১টি কমিউনিটি সেন্টার, গবাদি পশুর থাকার স্থান, ৫-৭টি টিউবওয়েল, এবং সমপরিমান স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ল্যাট্রিন। এভাবে চরের প্রায় ৫০০ এর বেশি পরিবার নির্ভরশীল প্লিন্থের ওপর। তিনি আরও জানান, দক্ষিণের উপকূলীয় এলাকায় আছে স্থানীয় উপকরণে তৈরি ৪টি জলবায়ু সহনশীল স্থাপনা। এর পাশাপাশি ১২টি নার্সারীর মাধ্যমে ১৫২ হেক্টর জমিতে করা হচ্ছে ম্যানগ্রোভ বনায়ন। গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন, ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেবার্গের চেয়ার এবং ফ্রেন্ডশিপ ইন্টারন্যাশনালের কো-চেয়ার মার্ক এলভিনগার, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পানি ও নদী বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র-সহ সরকারী-বেসরকারী সংস্থার বিষেজ্ঞরা। চরবাসীর ধারাবাহিক উন্নয়নে সবাই মিলে সমন্বিতভাবে কাজের তাগিদ দেন তারা। ফ্রেন্ডশিপ সম্পর্কে: যেখানে জীবন-জীবিকা হুমকিতে, সেসব প্রন্তিক এলাকার জনগোষ্ঠিকে স্বাবলম্বী করা এবং স্থানীয় জনগনের ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করছে উন্নয়ন সহযোগি সংস্থা ‘ফ্রেন্ডশিপ’। ২০০২ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষকে সহযোগিতা করে আসছে সংস্থাটি। দুর্গম প্রত্যন্ত এলাকার পাশাপাশি যেখানকার বাসিন্দারা জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার এমন জনগোষ্ঠিকে স্বাবলম্বী করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে সফলতার মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ফ্রেন্ডশিপ। সংস্থার আছে ৪ হাজারের বেশি কর্মচারী, যাদের ৫০ ভাগ স্থানীয় বাসিন্দা। ফ্রেন্ডশিপের আছে আন্তর্জাতিক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ও দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে মানুষের আশা ও মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার সমান সুযোগ থাকে।

Check Also

বিএনপির গণঅবস্থান শুরু

সংবাদবিডি ডেস্ক : সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে পূর্বঘোষিত গণঅবস্থান কর্মসূচি …