স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির পাগলাঘোড়া সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের হিসাবরক্ষক নাসির

বিশেষ প্রতিনিধি :
একের পর এক কেচোঁ খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রাঘব বোয়ালদের নামের তালিকা। যাদের নাম আলোচনায় তারা কেউ না কেউ  বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক। এদের সম্পদের পরিমাণ এতই বেশি সঠিক তথ্য বের করার জন্য কাজ করছেন দুর্নীতি দমন কমিশন। আর এর কারণ হিসেবে বেড়িয়ে আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম না মানার কারন। ঢাকার সব হাসপাতালগুলোতেই রয়েছে একই চিত্র।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, হাসপাতালের কর্মকর্তা এবং কর্মচারী এক-একজন একই টেবিলে যুগের পর যুগ ধরে বসে আছেন। সরকারি নিয়ম অনুসারে কর্মকর্তা দুই থেকে তিন বছরে বদলি করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এই নিয়ম না মানার কারণেই সকলে মিলে তৈরি করেছেন একটি সিন্ডিকেট। সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।
সূত্রমতে জানা গেছে,  দমন কমিশন ৫৯ জন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করলেও অদৃশ্য হাতের ইশারায় দুদকের অনুসন্ধান বেশি দূর এগুয়নি। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের দুটি ধারা এর মধ্যে একটি ধারা হল টেন্ডারবাজ সিন্ডিকেট অপরটি হলো প্রশাসনিক বলয়ের সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে মন্ত্রণালয় থেকে দুদক পর্যন্ত সব জায়গায় রয়েছে এদের হাত। দুদক স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে ব্যাপক তথ্য পেলেও তাদের টুটি টি পর্যন্ত ছুতে পারেনি।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের হিসাব রক্ষক নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ও ঢাকায় একাধিক আলিশান বাড়ি ও ফ্ল্যাট, গ্রামের বাড়িতে রয়েছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ।   হিসাব রক্ষক নাসিরউদ্দিন একই অফিসে দীর্ঘদিন আছেন। একই অফিসে বহু বছর থাকার কারণে ঘুষ দুর্নীতি অনিয়ম করে আসছেন তিনি। শুধু তাই নয়, এই কর্মকর্তার রয়েছে বিশাল ক্ষমতাসীন একটা সিন্ডিকেট ও দালাল চক্র। আর এই সিন্ডিকেট জিম্মি করে রেখেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল। এই অফিসে কর্মকর্তাসহ সেবা প্রার্থীরা জিম্মি রয়েছে এই হিসাব রক্ষক নাসির উদ্দিনের সিন্ডিকেট ও দালাল চক্ররে কাছ। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতি অনিয়মের শত শত অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিভিন্ন নথিপত্র জাল জালিয়াত এর মাধ্যমে এবং রোগীদের নিকট টিকেট বাবদ গ্রহনকৃত অর্থ গ্রহন করেন। নাসির উদ্দিনের প্রতি অতি দয়াবান কর্তৃপক্ষ তাই তার সরকারি হিসাবের খাতা জমা প্রদান না করে তিনি উক্ত টাকা নিজে আত্মসাৎ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালে বিভিন্ন বার্ষিক বাজেটর অর্থ সঠিকভাবে হিসাব প্রদান না করে তথ্য গোপন করেন। সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ এসব অনিয়ম দুর্নীতি বিষয়ে গত ১৪-০২-২০৩ ইং তারিখে মো. মোক্তার হোসেন, হিসাব রক্ষক নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে আবেদন করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাজধানী মিরপুর টোলারবাগ আবাসিক এলাকায় বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য দেড় কোটি টাকা। মোহাম্মাদপুর বছিলা এলাকা তার নিজের নামে একটি সাত তলা বাড়ি রয়েছে। বাড়ির নাম্বার ৫২০/৩ মোহাম্মদপুর, বসিলা, ঢাকা। ফ্ল্যাট ৫/বি, বাসা নাম্বার ৯৭১, রোড নাম্বার ১০ মোহাম্মদপুর জাকির হোসেন রোডে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় তার স্ত্রীর নামে দুটি প্লট। মিরপুর পিরেরবাগ ১০ কাঠার উপরে একটি মার্কেট রয়েছে জানা যায়। তার পরিবারের নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা জমা রয়েছে। যা তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণ পাওয়া যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা জানান, হিসাব রক্ষক নাসির উদ্দিন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে, কিছু অসাধু অফিসারের ও পরিচালকের নাম ভাঙ্গিয়ে অনিয়ম- দুর্নীতি করে আসছেন। শুধু তাই নয় নাসির উদ্দিন কথা অবাধ্য হলে বদলি করে দেয় হয় তাদের। তার সিন্ডিকেটের কারণে এখানে ভালো কোন সৎ অফিসার বেশি দিন থাকতে পারেনি। রহস্যজনক কারনে জবাবদিহিতা করতে হয়না কাউকেই । তিনি আরো বলেন, নাসির উদ্দিনের ঢাকা শহরে একাধিক আলিশান বাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লটসহ ব্যাংক ব্যালেন্স রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শতে হাসপাতালের একাধিক কমচারী নাসিরউদ্দিনকে মিরপুর টোলারবাগ এলাকার জমিদার অভিহিত করেন। ক্ষমতা ও টাকার দাপট এতটাই যে তার বিরুরদ্ধ ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয় না। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়, নামে বেনামে ঢাকার বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর করা আছে। উক্ত এফডিআর এর পরিমাণ ৮০- ৯০ লক্ষ টাকা বলে জানা যায়। নাসির উদ্দিনের এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, নাসির উদ্দিন শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক। আইনগত ঝামেলা এড়ানোর জন্যে নিজের স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনের নামে সম্পদ গড়েছেন। তার পরিবার ও আত্বীয় স্বজনের সম্পদ ও ব্যাংক ব্যালেন্স তদন্ত করলেই প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্টগণ মনে করেন। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের হিসাব রক্ষক নাসির উদ্দিনের আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের তদন্তের জন্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সাধারণ কর্মচারীগণ। ইতোমধ্যে মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মো. মোক্তার হোসেন, নাসির উদ্দিনের অবৈধ সম্পদ ও দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে আবেদন করেছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হিসাব রক্ষক নাসির উদ্দিন সবাইকে বলে বেড়ান দুদুকে অভিযোগ দিয়ে কোন লাভ হবে না। আমার দুদকের লোক রয়েছে। আমার হাত অনেক লম্বা। এসব বিষয়ে নাসিরুদ্দিনের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি ।
রবিবার 04:06 PM-এ Wahid Milton দেখেছেন
এন্টার করুন
Wahid Milton-এ লিখুন

Check Also

বিদেশে নয় দেশের মাটিতেই বিয়ের পরিকল্পনা রকুল-জ্যাকির

সংবাদবিডি ডেস্ক ঃ রকুল প্রীত সিং ও জ্যাকি ভাগনানির বিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি। বিয়ের প্রস্তুতি এখন …