প্রথম হলুদ ড্রাগন চাষে সফল হেলাল

ফিচার ডেস্ক :

২০০৭ সালের দিকে দেশে সর্বপ্রথম থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে ড্রাগন ফলের বিভিন্ন জাত আমদানি করা হয়। এটি মূলত আমেরিকার একটি জনপ্রিয় ফল। বর্তমানে বাংলাদেশেও এর বেশ জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা গেছে। তাই দেশের অন্যান্য জায়গার মতো চাঁদপুরে প্রথমবারের মতো দুর্লভ হলুদ ড্রাগনের চাষ করে সফল হয়েছেন সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন। যা বিশ্বে ‘কুইন অব ড্রাগন’ হিসেবে খ্যাত।

পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে প্রথমবারেই এ সফলতা পেয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে আশপাশের কৃষক ও উদ্যোক্তাদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই নতুন জাতের ড্রাগন। প্রতিদিন শত শত উৎসুক নারী-পুরুষ আসছে এখানে উৎপাদিত নানা জাতের এসব ড্রাগন ফল দেখতে। বিশেষ করে ভিন্ন জাতের ড্রাগন উৎপাদন ও তার সফল ফলন এই ফ্রুটস ভ্যালিতে অনেকটা ভিন্নমাত্রা এনে দিয়েছে।

চাঁদপুর শহরতলীর শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের শাহাতলীতে পরিত্যক্ত একটি ইটভাটায় ২০২০ সালে ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়। শহরতলীর যে স্থানে এ প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয় তার নিটকবর্তী স্থানের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ডাকাতিয়া নদী। নদীর কুলবর্তী স্থান ও এখানকার আবহাওয়া এ ফল চাষের জন্য সহায়ক হয়। ফলে খুব অল্প সময়ে ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো প্রকল্পটি তার লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পেরেছে।

সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন পরিত্যক্ত ইটভাটায় সম্পূর্ণ অর্গানিক উপায়ে বিদেশি নানা জাতের ফল উৎপাদন করে ইতোমধ্যে বেশ চমক সৃষ্টি করেছেন। বাজারে প্রচলিত হলুদ রংয়ের ড্রাগনের সঙ্গে এর মিল নেই। স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়। মিষ্টতা অনেক বেশি এবং রসাল।

ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো প্রকল্পে মোট ৭ জাতের ড্রাগন চাষ করা হয়েছে। তিন জাতের হলুদ ড্রাগন এই বাংলাদেশের ড্রাগন চাষিদের জন্যে সবচেয়ে লাভজনক হবে বলে মনে করেন এখানকার কৃষিবিদরা।

প্রথমবারের মতো দেশে হলুদ ড্রাগনের নতুন জাত বিশেষ করে বিশ্বখ্যাত আইসিস গোল্ড, গোল্ডেন ইয়েলো এবং পিটাহায়া ইয়েলো জাতের ফলন একমাত্র চাঁদপুরের ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোতেই হয়েছে। অপর দুটি অস্টেলিয়ান ও ফিলিপাইনের জাত। একই সঙ্গে লাল এবং খয়েরি রংয়ের আমেরিকান ব্রাউন বিউটি এবং লা ভার্ন রেড হাইব্রিড ড্রাগনের ফলনেও সফল হয়েছেন।

ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো প্রকল্পের স্বত্বাধিকারী হেলাল উদ্দিন জানান, এই ৪টি ড্রাগন এদেশে নতুন জাত। ব্যক্তিগত পর্যায়ে কারো কারো কাছে এসব জাত থাকলেও পরীক্ষামূলক সফল বাণিজ্যিক ফলন এই প্রথম। এসব জাত উচ্চ ফলনশীল এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক। এছাড়া এখানে উৎপাদিত লাল ড্রাগনের নতুন দুটি জাত এদেশে প্রচলিত লাল ড্রাগনের মতো হলেও সাইজ, রং, আকার, চেহারা এবং স্বাদে ভিন্নতা রয়েছে বলে জানান।

তিনি বলেন, সাধারণত অন্যান্য ড্রাগন ৪০০ গ্রাম থেকে ৯০০ ওজনের হয়ে থাকে। তবে গাছের বয়স ৩ বছর ছাড়িয়ে গেলে আইসিস জাতের একেকটি ড্রাগন ১ কেজি ওজন ছাড়িয়ে যাবে। ড্রগনের এই জাতিটা ঠাণ্ডা তাপমাত্রা সহনশীল হওয়ায় শীতকালেও ড্রাগনের চাষাবাদের মাধ্যমে ড্রাগনের প্রাপ্যতা ধরে রাখার আশা প্রকাশ করেন এই উদ্যোক্তা।

ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোর ম্যানেজার সোহান চৌধুরীসহ অন্যান্য স্টাফরা বলেন, সম্পূর্ণ অর্গনিক পদ্ধতিতে আমরা ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোর চাষাবাদ করেছি। ড্রাগন গাছের পরিচর্যা একটু বেশি করতে হবে। তাহলে ভালো ফলন আসবে। গত তিন মাস আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি এবং পরিশ্রম করেছি। যেমন- কচুরিপানা দিয়ে রেখেছি, মাটি একত্রিত করে নিয়মিত পানি দিতে হয়। এছাড়া মিলিবাগ পোকা, মাকড়সাসহ বিভিন্ন প্রকার পোকায় আক্রান্ত হয়। আমরা সব সময় সে বিষয়গুলো দেখে রেখেছি।

ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোতে ঘুরতে আসা দৈনিক চাঁদপুর কন্ঠের প্রধান সম্পাদক রোটারিয়ান কাজী শাহাদাৎ বলেন, আমি এর আগে বেশ কয়েকবার লাল ড্রাগন খেয়েছি। আজকে এই হলুদ জাতের ড্রাগন খেলাম। তবে এর আগে অন্য ড্রাগনে আমি এত স্বাদ পাইনি। হলুদ ড্রাগন খেয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে এটি একটি বিরল স্বাদের ড্রাগন।

এসব জাতও এদেশে বাণিজ্যিকভাবে যে চাষাবাদ উপযোগী তা ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোতে দেখা যাচ্ছে। সারা বিশ্বে আইসিস ড্রাগনকে সুপারফুড বিবেচনা করে ‘কুইন অব ড্রাগন’ নামে ডাকা হয়। সেই আইসিস গোল্ড ড্রাগনও এই ফ্রুটস ভ্যালিতে সফল ফলন হয়েছে। এই ড্রাগন মিষ্টি এবং সাইজে বড় ও একইসঙ্গে অনন্য সাইট্রাস স্বাদের অধিকারী। এর পুষ্টিগুণ অন্য সব ড্রাগনের তুলনায় অনেক বেশি।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, বিদেশি এই ড্রাগন ফল বিগত কয়েক বছর বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে। কৃষক ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকেই ড্রাগন আবাদ শুরু করেছেন। তবে এর মধ্যে হলুদ ড্রাগন এবার সাড়া ফেলেছে।

তিনি বলেন, চাঁদপুরে এই জাতটি জনপ্রিয় করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করে এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে চাঁদপুরের কিছু কৃষক উদ্যোগী হয়ে বাগান করেছেন। আমি আশা করি এই ফলটি চাঁদপুর জেলায় বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করবে।

Check Also

বিদেশে নয় দেশের মাটিতেই বিয়ের পরিকল্পনা রকুল-জ্যাকির

সংবাদবিডি ডেস্ক ঃ রকুল প্রীত সিং ও জ্যাকি ভাগনানির বিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি। বিয়ের প্রস্তুতি এখন …