ব্যাংকের মাধ্যমে স্বর্ণ কিনতে চান ব্যবসায়ীরা অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে নীতিমালা হবে * ‘গোল্ডব্যাংক’ নামে নতুন ব্যাংক স্থাপনের প্রস্তাব

অনলাইন ডেস্ক : স্বর্ণ ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনতে আমদানির পাশাপাশি ব্যাংকের মাধ্যমে স্বর্ণ কিনতে চান এ খাতের ব্যবসায়ীরা। এটা বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা যে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমেও হতে পারে। প্রয়োজনে ‘গোল্ডব্যাংক’ নামে নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। স্বর্ণ ব্যবসায় নীতিমালা তৈরির জন্য সম্প্রতি তারা সরকারের কাছে এ ধরনের ১৪ দফা সুপারিশসহ প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। তবে বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় চলতি বছরে এ নীতিমালা তৈরি সম্ভব নয়।

এ খাতের সঙ্গে বাণিজ্য, শিল্প ও অর্থসহ অনেক মন্ত্রণালয় জড়িত। ফলে সব মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করে নীতিমালা তৈরি করতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, স্বর্ণ ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনতে যত দ্রুত সম্ভব এ খাতে নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি।

দেশে স্বর্ণের ব্যবসার প্রায় পুরোটাই অবৈধ। এর ফলে দুই ধরনের সমস্যা হচ্ছে। প্রথমত- হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। দ্বিতীয়ত- বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। চলতি বছর আপন জুয়েলার্স থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ স্বর্ণ উদ্ধার করা হলে নীতিমালার বিষয়টি সামনে আসে। এরপরই ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত নীতিমালার সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়।

বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির (বাজুস) সভাপতি ও ভেনাস জুয়েলার্সের মালিক গঙ্গা চরণ মালাকার বলেন, আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বর্ণ ব্যবসার নীতিমালার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে নীতিমালার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে অন্যতম হল- আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বর্ণ কিনতে চাই। ভারতেও ব্যবসায়ীরা ওই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে স্বর্ণ কেনে। এরপর কারিগরের মাধ্যমে অলংকার তৈরি করে তা বাজারজাত করে। তিনি আরও বলেন, বাজুসের পক্ষ থেকে ২৫ বছর ধরে নীতিমালার জন্য বলা হলেও এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, স্বর্ণ আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক অত্যন্ত বেশি। এ কারণে মানুষ ভিন্ন চিন্তা করছে।

জানা গেছে, প্রতিবছর দেশে স্বর্ণের চাহিদা প্রায় ২১ টন। কিন্তু বৈধভাবে গত ১০ বছরে এক তোলা স্বর্ণও আমদানি হয়নি। অর্থাৎ ব্যবসার অধিকাংশই অবৈধ। অন্যদিকে স্বর্ণের দামে বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশীয় বাজারের পার্থক্য প্রায় ১২ হাজার টাকা। অর্থাৎ পুরো বাজারটাই একটি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম  বলেন, দুটি বিষয় খুবই উদ্বেগের। প্রথমত- তথ্যে উপাত্তে মনে হচ্ছে, দেশের স্বর্ণের চাহিদার বড় অংশই চোরাই পথে আমদানির মাধ্যমে পূরণ হয়। দ্বিতীয়ত- দীর্ঘদিন ধরে ভারতে স্বর্ণ পাচারের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দর। তিনি বলেন, বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি না হওয়ায় প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। এছাড়াও বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এ কারণে দ্রুত স্বর্ণের নীতিমালা করা প্রয়োজন।

জুয়েলারি সমিতির দেয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এলসি (ঋণপত্র) খুলে স্বর্ণ আমদানি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এলসির পণ্য বাংলাদেশে আসতে ২০ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। এ সময়ে বিশ্ববাজারে দাম ওঠানামা করতে পারে। এ কারণে এলসির পাশাপাশি (টিটি) টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফারের মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ থাকতে হবে।

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি কোনো ব্যাংক অথবা গোল্ড ব্যাংক নামে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসায়ীদের স্বর্ণ সরবরাহ করতে হবে। ব্যবসায়ীরা হ্যান্ড ক্যারির মাধ্যমে স্বর্ণ আনতে চাইলে অনুমতি দিতে হবে। পণ্য খালাসের প্রক্রিয়া আরও সহজ করার দাবি জানিয়েছে বাজুস। এছাড়াও শুল্কমূল্যে বৈষম্য কমানো, বিভিন্ন প্রণোদনা ঘোষণা ও বাংলাদেশে মজুদ করা স্বর্ণ বাজারে বিক্রির দাবি করেছেন তারা।

ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবে আরও বলা হয়, এলসি খুলে সোনা আমদানির জন্য ব্যবসায়ীদের আলাদা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক কাউকে অনুমতি দেয়নি। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড এবং মধুমতি ব্যাংক অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে অনুমতির বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করতে হবে। এছাড়াও আমদানি রফতানির ক্ষেত্রে ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থার সংস্কার চান ব্যবসায়ীরা।

স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবে আরও বলা হয়, বর্তমানে কোনো যাত্রী বিদেশ থেকে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণ নিয়ে আসতে পারেন। এ খাতে স্বচ্ছতার স্বার্থে যারা স্বর্ণ নিয়ে আসবেন, কাস্টমস থেকে তাদেরকে বৈধতার প্রমাণপত্র দিতে হবে। আর দোকানদার স্বর্ণ কিনলে ওই প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। জুয়েলারি সমিতির হিসাবে দেশের স্বর্ণের দোকানগুলোর প্রতি দিনের গড় বিক্রি ২৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে সোনার বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২১ টন। অর্থাৎ এ পরিমাণের স্বর্ণের অলংকার দেশে কেনাবেচা হয়। কিন্তু কাস্টম কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী গত ১০ বছরে দেশে এক তোলাও স্বর্ণ বৈধভাবে আমদানি হয়নি। বৈধ আমদানি না থাকায় এ খাত থেকে কোনো শুল্কও আদায় হয়নি। ব্যবসায়ীরাও বিষয়টি স্বীকার করছেন, কিন্তু উৎস সম্পর্কে সবাই নীরব। এতে প্রমাণিত হয় দেশের স্বর্ণের বাজার চলছে চোরাচালানের স্বর্ণে।

Check Also

বিদেশে নয় দেশের মাটিতেই বিয়ের পরিকল্পনা রকুল-জ্যাকির

সংবাদবিডি ডেস্ক ঃ রকুল প্রীত সিং ও জ্যাকি ভাগনানির বিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি। বিয়ের প্রস্তুতি এখন …