ভোটের হাওয়া: ময়মনসিংহ-৫ বিএনপিতে মুখোমুখি দুই ভাই আ’লীগের আতঙ্ক জোটে

অনলাইন ডেস্ক:ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মহাজোট নিয়ে জটিলতার আশঙ্কা আওয়ামী লীগে। মহাজোট টিকে থাকলে আগামী নির্বাচনেও এ আসনে ভাগ বসাতে চায় জাতীয় পার্টি (জাপা)। তবে ভোটের মাঠে জোটের শরিকদের এবার ছাড় দিতে নারাজ ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জাপাকে রুখে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে আওয়ামী লীগে।

 

বহুদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতির ময়দান থেকে বিএনপি অনেকটা উধাও। অথচ নির্বাচন সামনে রেখে হুট করে হুল্লোড়ে মেতেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে দুই সহোদরের মধ্যে চলছে মনস্তাত্ত্বিক বিরোধ।

 

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন সাতজন। তারা হলেন- সাবেক এমপি মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কে এম খালিদ বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বদর উদ্দিন আহমেদ, সাবেক পৌর মেয়র আবদুল হাই আকন্দ, সাবেক এমপি প্রয়াত অ্যাডভোকেট শামসুল হকের ছোট ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শাতিল মো. তারেক, কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম খোকন, বিটিভির সংবাদ পাঠিকা তাহমিনা জাকারিয়া ও সেলিমা সোবহান খসরু।

 

ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় একাধিক দায়িত্বশীল নেতা সমকালকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে কোন্দলে বিভক্ত হয়ে আছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। ফলে বেশ কয়েকটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি ঘটেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে মাত্র কয়েক ভোটের ব্যবধানে বিএনপির কাছে পরাজিত হন নৌকার প্রার্থী প্রয়াত রাশিদা মহিউদ্দিন। এই পরাজয়ের জন্য অনেকেই আবদুল হাইকে দায়ী করে থাকেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কে এম খালিদ বাবু বিপুল ভোটের ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে খালিদ বাবু পুনরায় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিলে তার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেন আবদুল হাই আকন্দ।

যদিও যাচাই-বাছাইয়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খালিদ বাবুও এমপি হতে পারেননি। কৌশলগত কারণে ওই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত আসনটি জাপা প্রার্থীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বর্তমান এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি নির্বাচিত হন। জাতীয় পার্টির এই যুগ্ম মহাসচিব এমপি হওয়ার পর স্থানীয় বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী লাভের আশায় তার চারপাশে ভিড় জমাতে থাকেন। কিন্তু ক্ষমতার শেষ পর্যায়ে এসে সেই ভিড় কমে এসেছে। ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা এই জনপ্রতিনিধি আগামী নির্বাচনেও প্রার্থিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে জাপার উপজেলা কমিটির সাবেক সভাপতি শামছুদ্দিন মাস্টারও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন। তারপরও বর্তমান এমপি মুক্তি বলেন, তার মেয়াদে এলাকার ব্যাপক উম্নয়ন হয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনেও মনোনয়নপ্রাপ্তি এবং বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে তিনি বেশ আশাবাদী।

 

তবে আগামীবার জাতীয় পার্টিকে এ আসনে ছাড় দিতে চান না স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আবদুল জলিল ফারুক জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে কোন্দল দীর্ঘদিনের। এ কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিলে বিরোধ থাকবে না। নিজেদের দূরত্ব ঘুচিয়ে নিলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত।

 

এদিকে, সমঝোতার পথে না হাঁটার আগাম ইঙ্গিত দিলেন মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক পৌর মেয়র আবদুল হাই আকন্দ। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বিগত কয়েকটি নির্বাচনে তিনি দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তার বিরোধিতার কারণে দল মনোনীত প্রার্থীর পরাজয়ও ঘটেছে। পৌরসভার মেয়র পদেও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই নির্বাচিত হয়েছিলেন আবদুল হাই। সর্বশেষ পৌর নির্বাচনে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন হাই। আগামী নির্বাচনে তিনি এমপি পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ প্রসঙ্গে সমকালকে বললেন, সাবেক এমপি খালিদ বাবু দলীয় মনোনয়ন পেলে প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মাঠে থাকবেন। আবার আওয়ামী লীগের বদলে যদি এবারও জাপা থেকে প্রার্থী দেওয়া হয়, তাহলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে অংশ নেবেন বলে জানান তিনি।

 

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বদর উদ্দিন আহমেদের দাবি, স্থানীয়ভাবে তিনি সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীদের চেয়ে এগিয়ে আছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে বিএনপির বিরুদ্ধে তিনিই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। বেশ কিছুদিন ধরে নিয়মিত গণসংযোগ চালাচ্ছেন- তাই দল ও স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে বলেও মনে করেন বদর উদ্দিন। আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী প্রয়াত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হকের ছোট ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শাতিল মো. তারেক। তিনি এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন, ভোটারদের ভোট চাইছেন। কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম খোকন এলাকায় ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিটিভির সংবাদ পাঠিকা তাহমিনা জাকারিয়া ও সেলিমা সোবহান খসরু খুব একটা সক্রিয় না হলেও মাঝেমধ্যে এলাকায় আসছেন।

 

এদিকে সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কে এম খালিদ বাবু নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, এমপি থাকাকালে এলাকার অনেক উম্নয়ন করেছেন। নেতা-কর্মীদের পাশে থাকছেন। তাই আগামীবার মনোনয়ন চাইবেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না বলেও জানান তিনি। বললেন, ‘কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল।’

 

২০০৮ সালের নির্বাচনে খালিদ বাবুর কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন ধানের শীষের প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেন বাবলু। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর এলাকায় তাকে দেখা যায়নি। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ কমেছে তার। তবে গত রমজানে বিভিম্ন ইফতার পার্টিতে তিনি যোগ দিয়েছেন। বর্তমানে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ বেড়েছে তার। প্রার্থিতার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তিনি। তাকে টপকে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতার পরিকল্পনা করছেন তারই বড় ভাই সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন। এ আসন থেকে পরপর দুবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন ময়মনসিংহ (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির সভাপতি পদে থাকা মোশাররফ। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে চলছে নীরব দ্বন্দ্ব। এ কে এম মোশাররফের পক্ষে কাজ করছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ এস এম জাকারিয়া হারুন। এ নিয়ে তার সঙ্গে বাবলুর বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও সাড়া মেলেনি।

 

সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন বলেন, এ আসনে দুবার এমপি হয়েছেন। ভোটারদের মধ্যে তার অবস্থান রয়েছে। কিন্তু ২০০৮ সালে দলীয় সিদ্ধান্তে সদর আসনে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছেন। আগামীবার এ আসনে পুনরায় প্রার্থী হলে বিজয়ী হতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন মুক্তাগাছা থেকে দু-দুবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী এই প্রার্থী। মুক্তাগাছার বিএনপি মানে এ কে এম মোশাররফ হোসেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ সদর আসনে মনোনয়ন দেওয়ায় তিনি জয়ী হতে পারেননি। তবে আগামী নির্বাচনে এ আসন থেকে আবারও প্রার্থিতার সুযোগ পেলে বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদী তিনি।

Check Also

বিদেশে নয় দেশের মাটিতেই বিয়ের পরিকল্পনা রকুল-জ্যাকির

সংবাদবিডি ডেস্ক ঃ রকুল প্রীত সিং ও জ্যাকি ভাগনানির বিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি। বিয়ের প্রস্তুতি এখন …