স্পোর্টস ডেস্ক:রাত পোহালেই পর্দা উঠছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এবারের আসরের। বৃহস্পতিবার স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচেই নেমে পড়বে ক্রিকেট দুনিয়ার নয়া ফেভারিট বাংলাদেশ। তার আগে এক নজরে দেখে নেয়া যাক চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগের আসরগুলোয় কেমন ছিল বাংলাদেশের পথচলা-
টুর্নামেন্টের শুরুটা হয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে। ১৯৯৮ সালের কথা। তখন নাম ছিল মিনি বিশ্বকাপ। ক্রিকেট বাণিজ্য-প্রসারের ক্ষুরধার মস্তিষ্ক, তৎকালীন আইসিসি সভাপতি জগমোহন ডালমিয়ার প্রসূত ১৯ বছর আগের সেই মিনি বিশ্বকাপই এখনকার আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম থেকে যাত্রা শুরু করে এবার ইংল্যান্ডে। তবে শুরুর সেই আসরে খেলা হয়নি বাংলাদেশের। দ্বিতীয় আসর থেকে মোট চারবার আইসিসির দ্বিতীয় বৃহত্তর এই ক্রিকেটযজ্ঞে শামিল ছিল টাইগাররা। যাতে ৮টি ম্যাচ খেলে ১ জয়ের পিঠে হার ৭টিতে।
২০০০ (আয়োজক কেনিয়া)
কেনিয়ায় বসা টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসরে বাংলাদেশ খেলতে যায় প্রথমবার। সব টেস্ট খেলুড়ে দেশ আর স্বাগতিকদের নিয়ে ১১ দলের আসর। সৌরভ গাঙ্গুলির ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জেতে স্টিভেন ফ্লেমিংয়ের নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ খেলা একমাত্র ম্যাচে প্রি-কোয়ার্টারে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট শেষ করে।
নাইরোবিতে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। তাতে জাভেদ ওমর বেলিমের ৬৩ ও নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের ৪৬ রানে ভর করে ২৩২ রানের সংগ্রহ গড়ে টাইগাররা। দুর্জয়ের অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকের ম্যাচে কাটা হয়ে দাঁড়ায় নাসের হুসেইন ও অ্যালেক্স স্টুয়ার্ট জুটি। দুজনে ১৭৫ রান যোগ করেন। নাসের ৯৫ করে ফিরলেও উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান স্টুয়ার্ট ৮৭ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ শেষ করে আসেন।
২০০২ (আয়োজক শ্রীলঙ্কা)
নামে পরিবর্তন এল। নতুন নাম পেল টুর্নামেন্ট- আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ১৫ ম্যাচের আসরে ১২টি দলের অংশগ্রহণ। চার গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলে গ্রুপসেরারা পেল সেমির টিকিট। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা ও ভারত যৌথ চ্যাম্পিয়ন বৃষ্টির বিভ্রাটে। বাংলাদেশ ছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের গ্রুপে। অজিদের জেসন গিলেস্পি ও কিউইদের শেন বন্ড দুঃস্বপ্নে পরিণত করে দেয় বাংলাদেশের টুর্নামেন্ট যাত্রা।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৩ রানে ৪ উইকেট খোয়ানোর পর অলক কাপালি ৪৫, তুষার ইমরান ২৭ ও খালেদ মাসুদ পাইলটের ২২ রানে ১২৯ পর্যন্ত পৌঁছায় টাইগাররা। গিলেস্পি ৩টি, ব্রেট লি ও শেন ওয়াটসন নেন ২টি করে উইকেট। অজিরা সহজেই ম্যাচটা জিতে নেয়। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ৫৪ ও ম্যাথু হেইডেনের অপরাজিত ৬৭ রানে ৯ উইকেটে জেতে অস্ট্রেলিয়া। তাদের উদ্বোধনী জুটিতেই আসে ১১৩ রান।
পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ড তোলে ২৪৪। ম্যাথু সিনক্লেয়ার ৭০ করেন। মোহাম্মদ আশরাফুল ৫ ওভারে ২৬ রানে ৩ উইকেট নেন। মঞ্জুরুল ইসলাম ও খালেদ মাহমুদ নেন ২টি করে উইকেট। ব্যাটিংয়ে এসে এক সময় ৩৬ রানেই ৬ উইকেট খোয়ানো টাইগাররা গুটিয়ে যায় ৭৭ রানে। সেও মাত্র ১৯.৩ ওভারেই। সর্বোচ্চ তুষার ইমরানের ২০, দ্বিতীয়টি মোহাম্মদ রফিকের ১৭ রান। বন্ড ৫ ওভারে মাত্র ২১ রানে ৪ উইকেটে নেন। হারটি ১৬৭ রানে।
২০০৪ (আয়োজক ইংল্যান্ড)
সাউথ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই হারের বৃত্তই মেলে। নিয়মিত অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের হঠাত চোটে আফ্রিকার বিপক্ষে টস করতে নামেন সহ-অধিনায়ক রাজিন সালেহ। তখন তার বয়স ছিল ২০ বছর ২৯৭ দিন। ওয়ানডের সবচেয়ে কম বয়সী অধিনায়ক বনে যান তিনি। আজো সেই রেকর্ডটি অক্ষত!
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এজবাস্টনে টস জিতে ফিল্ডিং নেন রাজিন। ২০ রানে ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের। নাফিস ইকবালের ৪০ রানে ৯৩ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে টাইগাররা। আফ্রিকানরা ম্যাচটা জিতে নেয় ৯ উইকেটে।
সাউদাম্পটনে পরের ম্যাচে গেইলের ৯৯ রানে র করে ৩ উইকেটে ২৬৯ তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাপস বৈশ্য ২টি উইকেট নেন। জবাবে ২৬ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে টেনে নেন নয় নম্বরে নামা খালেদ মাহমুদ। তার অপরাজিত ৩৪ রানে ১৩১ পর্যন্ত যায় টাইগাররা। ক্যারিবীয় মারভিন ডিলন ৫ উইকেট নিয়ে মূল হন্তারক। পরে টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজই।
২০০৬ (আয়োজক ভারত)
ফরম্যাট বদলাল। ১০ দলের টুর্নামেন্টে দুভাগ। ৬ দল সরাসরি মুল পর্বে। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে প্রথম পর্বে খেলল। যেখান লঙ্কান আর ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে হেরে মূল পর্বে যাওয়া হয়নি টাইগারদের। তবে তৃতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রতিযোগিতাটির ইতিহাসে নিজেদের একমাত্র জয়টি পায় বাংলাদেশ। ভারতের মাটিতে সেবার সেরা রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া।
জয়পুরে ওই জয়ের ম্যাচেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে সেঞ্চুরি পান শাহরিয়ার নাফিস। তার অপরাজিত ১২৩ রানে ভর করে ৬ উইকেটে ২৩১ তোলে বাংলাদেশ। সাকিব ৩৬ ও হাবিবুল ৩০ রান করেন। পরে তিন বাঁহাতি স্পিনারে তোপে ১৩০ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবুইয়ানরা। সাকিব আল হাসান ১৮ রানে ৩টি, আব্দুর রাজ্জাক ১২ ও মোহাম্মদ রফিক ২৬ রানে ২টি করে উইকেট নেন। মাশরাফি ৭ ওভারে ২ মেডেনসহ মাত্র ১৬ রানে এক উইকেট নেন।
তার আগে টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মোহালিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নামে বাংলাদেশ। উপুল থারাঙ্গার শতকে লঙ্কানরা ৩০২ রান তোলে। তখন সেটা পাহাড় সম! বাংলাদেশকে অবশ্য পরে অলআউট করতে পারেনি ভাস-মুরালিধরনের আক্রমণ। ৯ উইকেটে ২৬৫ রান তুলে পঞ্চাশ ওভার শেষ করে লাল-সবুজরা। সাকিব ৬৭ রানে অপরাজিত থাকেন। পরের ম্যাচে জয়পুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নেমে গেইলের তোপে পড়ে বাংলাদেশ। গেইলের সেঞ্চুরিতে ১০ উইকেটের হার জুটেছিল। শুরুতে ব্যাট করে আফতাব আহমেদের ৫৯ রানে ৪৬.৩ ওভারে গুটিয়ে যাওয়ার সময় ১৬১ রান পর্যন্ত যায় টাইগাররা। গেইল ১১ চার ও ৩ ছয়ে ১১৮ বলে ১০৪ রান করেন।