গরমে রমজানের প্রস্তুতি ও সুস্থতায় করণীয়

পবিত্র মাহে রমজান। মুসলমানদের জন্য এ মাস অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। সুস্থ প্রাপ্ত বয়স্ক সকল মুসলমানের জন্য রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। সাধারণত প্রতিবছর রোজা একটু এগিয়ে আসতে থাকে বলে এবার গরমের মধ্যেই শুরু হচ্ছে রোজা। এই সময়ে রোজা রাখা একটু কষ্টকর। প্রচণ্ড রোদ ও গরমে দেহ পানিশূন্য হয়ে যায়। তাই রমজানে বেশির ভাগ মানুষই পানিশূন্যতায় ভুগে থাকেন। আবার অনেকেই আছেন যারা নিজেদের অসুস্থতা সত্ত্বেও পবিত্র এই মাসে রোজা পালন করেন। শুধু অসুস্থ নয়, বরং সুস্থ ধর্মপ্রাণ মুসলমানও এই গরমে রোজা পালনকালে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তবে রমজানে সারা দিনের সুস্থতা অনেকাংশে আপনার ওপরই নির্ভর করে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সেহরিতে সঠিকভাবে খাদ্য নির্বাচন এবং কিছু বিষয় মেনে চললে সারাদিন সুস্থভাবেই রোজা করা সম্ভব। এক্ষেত্রে কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি। তারা বলছেন, রমজানে একটি বিশেষ রুটিন মেনে চললে নিরাপদ রোজা পালনের পাশাপাশি আপনার সুস্থতাও নিশ্চিত হবে।

গরমে রোজাদারদের শারীরিক যেসব পরিবর্তন হতে পারে-

# আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৬.৫-৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদি পরিবেশের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়, তবে শরীরের পিএইচ (pH )-এর পরিবর্তন ঘটে। এতে সব স্বাভাবিক বিপাক ক্রিয়া ও বায়োকেমিক্যাল কার্যক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

# অতিরিক্ত গরমে শরীর থেকে দরকারি পানি ও ইলেকট্রলাইট (লবণ ও মিনারেল) বের হয়ে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, চোখে ঝাপসা দেখা, কর্মক্ষেত্রে মনোযোগ নষ্ট হওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। এমনকি সচেতন না হলে মৃত্যুঝুঁকিও হতে পারে।

# প্রচণ্ড গরমে দীর্ঘ সময় রোজা রাখলে পানিশূন্যতা, বুক জ্বালা/ এসিডিটিসহ নানা সমস্যা হতে পারে।

# গরমে ইফতার ও সেহরির খাবারে ব্যাকটেরিয়াসহ নানা জীবাণু জন্মাতে পারে। এতে খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়ে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।

# দীর্ঘ সময় রোজাতে শরীরে জমানো গ্লাইকোজেন শক্তির উৎস আট ঘণ্টা পর শেষ হয়ে চর্বি থেকে শক্তি আসতে গিয়ে বিভিন্ন মেটাবলিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কাজেই এসব সমস্যা থেকে উত্তোরণে রোজাদারগণের উদ্দেশ্যে নানা পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, পবিত্র রমজানে আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে। আর সব থেকে বড় পরিবর্তন হয় খাবারের ক্ষেত্রে। গরমে প্রায় ১৫ ঘণ্টা রোজা রাখতে গিয়ে অনেকেরই পানিশূন্যতা, বুকজ্বালা কিংবা মাথাব্যথার মতো নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কাজেই এ সময় সুস্থতায় সঠিক খাবার নির্বাচন করা জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, রমজানে চাই স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার। আমরা সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারে অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার খাই। এ খাবারগুলো অনেক সময় বাইরে থেকে কিনে আনি। যার মান নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। আর অস্বাস্থ্যকর এসব খাবার রোজাদারের কষ্টকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

এবার জেনে নিন গরমে স্বাস্থ্যকর রোজা পালনে সেহরি, ইফতার ও রাতের খাবারে কী খাবেন-

সেহরি

প্রোটিন জাতীয় খাবার পানির তৃষ্ণা বাড়ায়। সারাদিন খাওয়া হবে না ভেবে অনেকে সেহরিতে ভূরিভোজ করেন। তাদের খাবারের তালিকায় থাকে মাছ মাংসসহ হরেক পদের প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। কিন্তু মাছ-মাংস অর্থাৎ প্রোটিন জাতীয় খাবার পানির তৃষ্ণা বাড়ায়, যা রোজাদারের কষ্ট বাড়িয়ে দেয়। তাই এই গরমে সারাদিন তৃষ্ণাহীন ঝরঝরে অনুভূতি পেতে সেহরিতে ভাতের সঙ্গে শুধু সবজি (ভাজি বা ঝোল করে) খান। সেহরিতে অল্প হলেও খান। প্রয়োজনে খেজুর-কলা বা দই-চিড়াও খেতে পারেন।

ইফতার

ইফতারে ভাজা-পোড়া, গুরুপাক ও অতিরিক্ত মশলাদার, রকমারি অস্বাস্থ্যকর খাবার যত কম খাওয়া যায় তত ভালো। বাজার থেকে কেনা ইফতারির চেয়ে ঘরে তৈরি খাবার তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ। এই গরমে সুস্থ থাকতে ইফতারে চিড়ার শরবত হতে পারে অনন্য পানীয়। ইফতারের আগে চিড়া ভিজিয়ে রাখুন। বাদামী চিনি (আখের) অথবা আখের গুড় মিশিয়ে তা ইফতারিতে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া বোতলজাত জুস কিংবা শরবতের পরিবর্তে দুই/ তিনটি খেজুর খেয়ে পানি পান করতে পারেন। খেজুরে আছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শর্করা, চিনি, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, কপার, সালফার, ম্যাঙ্গানিজসহ নানা উপাদান। খেজুর ও পানি মিলে সুক্রোজ তৈরি করে, যা তাৎক্ষণিক প্রাণশক্তি এনে দেয়। তাই ইফতারে ভাজা-পোড়া খাবারের পরিবর্তে খেজুর, পানি, ডিম ও কলা ও ফলমূল খান।

রাতের খাবার

রাতের খাবারে শাক-সবজি, মাছ-মাংস, ডিম, ডালসহ অন্যান্য সুষম খাবার দিয়ে সেরে নিতে পারেন। ইফতারির পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বার বার পানি পান অভ্যাস গড়ে তুলুন।

পুরো রোজায় সুস্থ থাকতে করণীয়-

– বেশি ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এগুলো বদহজম, বুক জ্বালাপোড়া, ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।

– যেসব খাবারে অতিরিক্ত চিনি থাকে এগুলো এড়িয়ে চলুন।

– সেহরি ও ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাবার খাওয়া ঠিক নয়।

– সেহরিতে ভাত, রুটি, মসুর ডাল, শাকসবজি বেশি পরিমাণে খান। এ খাবারগুলো পাকস্থলীতে পরিপাক হতে অনেক সময় লাগে।

– সেহরি ও ইফতারের মাঝে প্রচুর পানি পান করুন।

– প্রতিদিনের ইফতারে কয়েক পদের ফল রাখার চেষ্টা করুন।

– রোজা রেখে রাতের খাবারে ভুনা মাংস, পোলাও জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভাল, এগুলো খেলে বেশি পানির তেষ্টা পায়।

– অতিরিক্ত চা ও কফি খাওয়া ঠিক নয়।

– অনেকেই ঘুম থেকে জেগে সেহরি খেতে চান না, সেহরি না খেয়ে রোজা রাখলে শরীর ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে যায়। তাই একটু কষ্ট হলেও সেহরি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

শুধু খাবার নয়, রোজায় ক্লান্তিহীন থাকতে আরও কিছু বিষয় জেনে রাখা জরুরি। রোদে বাইরে গেলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করুন। চাইলে দিনে দুইবার গোসল করতে পারেন। আবার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য ওযু করা ছাড়াও বার বার ঠাণ্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। এছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য কোনো অসুখ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে, রোজা রেখে নিয়মিত ওযুধ খাওয়ার সময় ঠিক করে নিন। এতে রমজানে রোজা রেখেও আপনি থাকবেন একেবারেই সুস্থ।

Check Also

বিদেশে নয় দেশের মাটিতেই বিয়ের পরিকল্পনা রকুল-জ্যাকির

সংবাদবিডি ডেস্ক ঃ রকুল প্রীত সিং ও জ্যাকি ভাগনানির বিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি। বিয়ের প্রস্তুতি এখন …