বিনোদন ডেস্ক :বাংলাদেশের সঙ্গীত অঙ্গনে অনেক মেধাবী সঙ্গীত শিল্পীকে প্রান্তিক পর্যায় থেকে তুলে এনে সেলিব্রটির আসনে বসিয়েছে সঙ্গীত বিষয়ক প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান ক্লোজআপ ওয়ান। বেশ কিছু শিল্পী ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পেয়েছেন তারকা খ্যাতি। এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কোন কোন শিল্পী পাড়ার মঞ্চ থেকে চলে এসেছেন টিভি’র পর্দায়। গানের মাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছেন মানুষের হৃদয়ের গভীরে। মানুষের ভালোবাসায় নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সঙ্গীতের জগতে।
সাজিয়া সুলতানা পুতুল
সঙ্গীত শিল্পী সাজিয়া সুলতানা পুতুল ২০০৬ এর ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে পেয়েছেন তারকা খ্যাতি। যদিও সঙ্গীতের সঙ্গে পথ চলা তার দীর্ঘ দিনের। লেজার ভিশন থেকে বাজারে এসেছে ‘পুতুল গান’ শিরোনামের তৃতীয় একক অ্যালবাম।
সময়ের আলোচিত এ শিল্পী একটি মিক্সড অ্যালবামেও কাজ করেছেন। এছাড়াও ক্যাকটাস নামে একটি মিক্সড অ্যালবামের কাজ করছেন। এতো কিছুর পরও পড়াশুনা ঠিক রেখে চলেছেন তিনি। ইউডা থেকে সঙ্গীতের উপর অনার্স শেষ করেছেন। এখন মাস্টার্স করছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে। গান, পড়াশুনার পাশাপাশি ক্লোজআপ ওয়ান ২০১২ এর প্রতিযোগিতায় উপস্থাপনা করেছেন পুতুল। আর সিনেমার প্লে-ব্যাক তো নিয়মিতই করছেন। এভাবেই চলছে পুতুলের ব্যস্ততা।
বিউটি
ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতায় ‘আমাকে কি রাখবেন গুরু চরণে’ শীর্ষক লালনের গানটি গেয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন লালনকন্যা-খ্যাত বিউটি। মূলত এ গানটির মাধ্যমে একটি ভাল পরিচিতিও লাভ করেন তিনি।
কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ধরণের গানের প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করছেন। এছাড়া সঙ্গীতের উপর অনার্স পড়ছেন ইউডা’র সঙ্গীত বিভাগে।
রিঙ্কু
ক্লোজআপ তারকা রিঙ্কু এখন দূর্দান্ত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নতুন স্টুডিও নিয়ে। রিঙ্কু এবং তার বন্ধুরা মিলে সম্প্রতি গড়ে তুলেছেন সম্পর্ক নামের একটি মিউজিক স্টুডিও। নতুন গড়ে উঠা এ স্টুডিও সঙ্গীত পরিবেশনা এবং প্রযোজনার কাজ করবে বলে জানান রিঙ্কু।
স্টুডিও আর স্টেজ পারফরমেন্স নিয়ে এখন রিঙ্কুর ব্যস্ততা। কাজের বাইরে যতোটুকু অবসর মিলে তার পুরোটাই স্ত্রী আর একমাত্র ছেলে মহৎ এর জন্য। সংসার আর গানের চর্চা নিয়ে দূর্দান্ত ব্যস্ত আছেন সময়ের জনপ্রিয় তারকা রিঙ্কু।
রন্টি দাশ
সংসারের ব্যস্ততা ছেলেদের চাইতে মেয়েদের একটু বেশীই। সেটা আরেক ক্লোজআপ তারকা রন্টি দাশকে দেখলে বোঝা যায়। একমাত্র সন্তান আড়াই বছরের আর্শিকে নিয়েই সময় কাটে তার। তবুও সংসারের বাইরে যেটুকু সময় পাওয়া যায় তার পুরোটাই গান নিয়ে থাকেন এ ক্লাজআপ ওয়ান তারকা।
সংসারের ব্যস্ততার মাঝেও তিনি সিনেমার গানে প্লে-ব্যাক করেছেন ভালোবাসার রঙ, তোমায় আমি ভালোবাসি, পায়রাসহ বেশ কিছু ছবিতে। আর সুযোগ পেলেই যাচ্ছেন স্টেজ পারফরমেন্সে।
সানিয়া সুলতানা লিজা
গানের ভূবনে যাত্রা শুরু তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে এক শিক্ষিকার উৎসাহে। লিজার বাবারও স্বপ্ন ছিল লিজা সংগীত শিল্পী হোক। কিন্তু বাধ সাধেন লিজার মা। তিনি বরাবরই গানের চেয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়ার ব্যপারে লিজাকে উপদেশ দিতেন। তাই বলে লিজা থেমে থাকে নি। বাবার উৎসাহ ও শিক্ষিকার পরামর্শে লিজা ভর্তি হন গৌরীপুর সঙ্গীত নিকেতনে। সেই থেকে লিজার পথচলা শুরু।
সেদিনের সেই লিজা ২০০৮ সালের ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। তারপর আর থেমে থাকা নয় – ১টি একক অ্যালবামের পাশাপাশি ৫টি মিক্সড অ্যালবাম ও চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাকও করছেন সানিয়া সুলতানা লিজা।
২০১২ সালের ২ মার্চ পারিবারিকভাবে সানিয়া সুলতানা লিজার আংটি বদল হয়। স্বামী বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিউজ প্রোডিউসার ইকবাল মাহমুদ বাবলু।
সাজু
ক্লোজআপ ওয়ান তারকা সাজু। ২০০৮ সালে ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় রানার আপ। তিনি চ্যাম্পিয়ন না হওয়ায় বিক্ষোভ করেছিলো কুড়িগ্রামবাসী। উত্তরাঞ্চলের গোন্ডি পেরিয়ে এই ফোকশিল্পীর গান সুনাম ছড়িয়েছে সারা দেশে। ইতোমধ্যে তার ডজন খানেক একক অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে অডিও বাজারে। চলছে নতুন অ্যালবামের কাজ। ২০০০ সালে জাতীয় শিশু একাডেমী , ২০০৩ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ, ২০০৫ সালে বঙ্গবন্ধু শিশু মেলা থেকে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। ২০০৩ সালে রংপুর বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন তিনি। বাংলাদেশ টেলিভিশনেরও তালিকাভুক্ত শিল্পী তিনি। এরপর তিনি ক্লোজআপ ওয়ানে আসেন।
সালমা আক্তার
বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা মূলক গানের অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে ক্লোজআপ ওয়ান অন্যতম। ক্লোজআপ ওয়ানের দ্বিতীয় আসরের সেরা আবিস্কার সালমা আক্তার।’ও মোর বানিয়া বন্ধুরে/ একটা তাবিজ বানায়া দে’ সালমা আক্তারের এ গানটি শুনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে ক্লোজআপ ওয়ান তারকা সালমা আক্তারের কন্ঠেই। ক্লোজআপ ওয়ান : তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার বিজয়ীর মধ্যে অন্যতম সফল কুষ্টিয়ার মেয়ে মৌসুমী আক্তার সালমা। ২০০৬ থেকে ২০১০—এই সময়ে তার গাওয়া বেশ কয়েকটি গান জনপ্রিয়তা পায়। ২০১১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ব্যক্তিগত কারণ আর পড়াশোনার ব্যস্ততায় গানের বাইরে ছিলেন। ২০১৫ থেকে আবারও নিয়মিত হন নতুন অ্যালবাম, প্লেব্যাক, টিভি লাইভ, স্টেজ শোর সঙ্গে লেখাপড়াটাও ঠিক মতো চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্বামী শিবলী সাদিকের সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘটনাকে জীবনের একটি দুর্ঘটনা বলেই দেখছেন সালমা। গানই এখন তার ধ্যান-জ্ঞান।
সুলতানা ইসলাম লায়লা
ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতার সর্বশেষ আসরের সেরা হয়েছেন নাটোরের মেয়ে সুলতানা ইসলাম লায়লা। বাবা শফিকুল ইসলাম মৃধা ও চাচা খালেক দেওয়ানের অনুপ্রেরণাতেই গানের ভুবনে পা রেখেছেন তিনি। তার বাবা একজন বাউলশিল্পী। তাই ছোটবেলা থেকেই গানের পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন তিনি। লায়লা সেরা ক্লোজআপ তারকা’খ্যাতি কয়েক মাস আগেই পেয়েছেন। কিন্তু এখনো তিনি তার নতুন অ্যালবামের কাজ শুরু করতে পারেননি। তবে কিছুদিনের মধ্যেই লায়লা তার অ্যালবামের কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।
নোলক বাবু
নোলক বাবু বাংলাদেশের একজন প্রতিভা। সে ক্লোজ আপ ওয়ান বাংলাদেশের প্রথম সিজন এর বিজয়ী ছিল। ক্লোজ আপ ওয়ান যখন তার মত প্রতিভাবান লোকদের খুজছিল তখনি নোলক বাবুর উদয় ঘটে। সঙ্গিত প্রেমীদের কাছে নোলক বাবু একটি অতি পরিচিত নাম।
সে খুবই দরিদ্র একটি পরিবার এ জন্মগ্রহণ করছিল। তার পরিবার এতই গরীব ছিল যে সঙ্গিত শেখার মত টাকা পয়সা তার কাছে ছিল না। জামালপুর শিল্পকলা একাডেমী তাকে সঙ্গিত এর হাতে-খড়ি করায়। তারপর সে কোন বাদ্দ্যযন্ত্র ছাড়াই সঙ্গিত চর্চা শুরু করে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তার গরীব প্রতিবশীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
সময়, পরিবেশ এবং অবস্থান বিচারে ‘ক্লোজআপ ওয়ান’ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে বলতে গেলে হারিয়েই গেছেন নোলক বাবু। অথচ এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার পর কনসার্টের জন্য টানা দুই মাসেরও বেশি সময় নোলকের শিডিউল বুকড ছিল! তাকে ঘিরে মানুষের প্রত্যাশাও ছিল অনেক। কিন্তু বেপরোয়া জীবন যাপনের কারণে একের পর এক নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হতে থাকেন জামালপুরের এই তরুণ।
এখন পর্যন্ত সাতটি একক অ্যালবাম করেছেন। গেয়েছেন কয়েকটি দ্বৈত এবং মিক্সডে। প্লেব্যাক করেছেন পাঁচ-ছয়টি চলচ্চিত্রে। নাটকের গানেও শোনা গেছে তার কণ্ঠ।
গায়ক নোলক এখন সুরকারও। নিজের সুরে ২০১৫ সালে প্রকাশ করেছিলেন একক অ্যালবাম ‘আমার আকাশ’। তার কিছুদিন পর প্রকাশ করবেন ‘চাঁদের আলো’।
বাধন
কিছু দিন আগে একটি বিয়ার পার্টিতে তাকে গান পরিবেশন করতে দেখা গেছে। কি অদ্ভুত বিষয়! তাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছিলো না সে একজন “ক্লোজ আপ ওয়ান” শিল্পী। একজন নামকরা তারকা। তিনি আবার একজন প্রকৌশলী। তার চেয়ে বড় কথা হল উনি নাকি গানকে পেশা হিসেবে নেননি। তাহলে এখানে গান করছেন কেন? “ক্লোজ আপ ওয়ান” শিল্পীরা কি এতটাই সস্তা! উনি আবার সংগীত জগতের সাথে ওতপ্রেতভাবে জড়িত।
উনি যা বললেন, যারা ক্লোজ আপ শিল্পী হয়েছে তাদের অবস্থা নাকি বেশ খারাপ। একটি অ্যালবাম করতে নাকি খরচ হয় কমপক্ষে ২ লাখ টাকা। কিন্তু একজন শিল্পী কমপক্ষে ওই অ্যালবাম থেকে পায় সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। এর কারন হল পাইরেসি। তাই কনসার্ট, স্টেজ শো আর এসব অনুষ্ঠান ছাড়া তাদের উপার্জনের আর কোন উপায় নেই।
রাশেদ
রাশেদকেও এখন আর গানের জগতে খুব একটা দেখা যায় না। ক্লোজ আপ ওয়ান অনুষ্ঠানে তার অনেক নামডাক থাকলেও এখন আর তাকে গানের জগতে খুজে পাওয়া যায় না। কিন্তু তার মৌলিক একক ‘মা’ গান্ টি এখনও অনেক জনপ্রিয়।
ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার প্রথম আসরে ‘মা’ শিরোনামের একটি গান গেয়ে দারুণ প্রশংসা পেয়েছিলেন রাশেদ। এবার তিনি অভিনয় জগতে পা দিয়েছেন।
রাশেদ বললেন, ‘যেহেতু আগে আমার গানের মিউজিক ভিডিও তৈরি হয়েছে, তাই অভিনয়ের সঙ্গে কিছুটা পরিচিত ছিলাম। তবে নাটকে অভিনয় করব তা কখনো ভাবিনি।’