নিউজ ডেস্ক: মোংলা বন্দর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর। ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এই বন্দরটি।
কিন্তু, গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসা, বন্দরের অব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন সরকারের অবহেলা এবং পশুর নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ার কারণে জাহাজ চলাচল কমতে থাকে এই বন্দরে।
তবে মোংলা বন্দরকে সচল করতে বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বর্তমান সরকার। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য ফিরবে বলে মনে করছেন এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বন্দর সচলে বর্তমান সরকার বেশকিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তার মধ্যে চলমান প্রকল্পগুলো হলো-পিপিপি এর আওতায় মোংলা বন্দরের ২টি অসম্পূর্ন জেটি নির্মাণ,
কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, মোংলা বন্দরের জন্য নিসৃত তেল অপসারনকারী জলযান সংগ্রহ, মোংলা বন্দর হতে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত ক্যাপিটাল ড্রেজিং, পশুর চ্যানেলের আউটার বারে ড্রেজিং, স্ট্রাটেজিক মাস্টার প্লান ফর মোংলা পোর্ট ও ৫-৯ নং জেটি শীট পাইলিং প্রকল্প।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্দরের প্রধান সমস্যা নাব্যতা সংকট দূর করতে প্রায় ১০৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে পশুর চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের জন্য নতুন দুটি ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়েছে।বন্দরের জেটিতে কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ২২টি অত্যাধুনিক স্ট্রাডল ক্যারিয়ার ও মোবাইল ক্রেনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। আমদানি করা গাড়ি রাখার জন্য বন্দরে নতুন দুটি কার পার্কিং ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে।
নতুন একটি কনটেইনার ইয়ার্ডও নির্মাণ করা হয়েছে জেটিতে। এ ছাড়া বন্দরের জন্য আরও দুটি নতুন জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
কথা হয় মোংলা কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুলতান হোসেন খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, মোংলা বন্দর সচলে প্রধানমন্ত্রী তার অনুসাশন বিভাগ কর্তৃক একটি কমিটি করে দিয়েছে। এই বন্দরকে সচল করতে তারা কাজ করে যাচ্ছে।
এই বন্দরের প্রধান সমস্যা নাব্যতা সংকট দূর করতে আমাদের ১২০ কোটি টাকার ড্রেজিং কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই দুটি ড্রেজার পেয়েছি। তবে ড্রেজিং কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য আমাদের ৬টি ড্রেজার প্রয়োজন।
এই বন্দরের সমস্যাগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে কনটেইনারজাত দ্রব্য যেমন শিল্পের কাঁচামাল, মেশিনারিজ, কর্মাশিয়াল কার্গো ইত্যাদি আসা কমে গেছে। কাস্টস এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পারস্পরিক বোঝাপড়ার কারণেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
এছাড়া এখানে দ্রুত খালাস পদ্ধতি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। রেলস্টেশন বিধিমালা ২০০০ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এসব কারণে এখানে কনটেইনার আসে না।
তিনি বলেন, এই বন্দরকে সচল করতে বর্তমান সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে একে পুরোপুরি সচল করতে হলে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রয়োজন। তাহলে পশুর নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাবে এবং ড্রেজিং ব্যবস্থা সম্পন্ন হবে।
ফলে এই অঞ্চলের প্রায় ৪ কোটি মানুষের ভাগ্য ফিরে আসবে। আমি আশাবাদী মোংলা বন্দর আবার চালু হবে।
এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে। এই বন্দরকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীরা এই অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে তুলছেন।
বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি এর সভাপতি শেখ লিয়াকত হোসেন বলেন, বর্তমানে এই বন্দরে যেসকল সমস্যা রয়েছে তা সমাধান করলে দ্রুতই প্রাণ ফিরে পাবে এই বন্দর। এসময় তিনি খুলনায় অবস্থিত মোংলা কাস্টমসকে মোংলায় স্থানান্তরে দাবি জানান।
তিনি বলেন, কাস্টমস মোংলায় স্থানান্তরিত হলে বন্দরের কাজকর্ম অনেক সহজ হবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর এ কে এম ফারুক হাসান বলেন, আমাদের ডিজিটাল স্ক্যানিং পদ্ধতি প্রক্রিয়াধীন আছে। আগের তুলনায় বর্তমানে পণ্য হ্যান্ডেলিং বেড়েছে।
মোংলা বন্দরকে আরও কার্যকরী করতে অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছে। এই বন্দর সচলে জি টু জি পদ্ধতিতে চায়না, ভারত বা অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলে যদি চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা যায়। তাহলে এই বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন তিনি।