প্রথমবারের মতো ঢাকায় আসছেন পবিত্র মক্কা ও মদিনার প্রধান দুই ইমাম। পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম ড. শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইসি ও মদিনা শরীফের মসজিদে নববীর সিনিয়র ইমাম শায়খ ড. আলী বিন আবদুর রহমান আল হুযাইফি ঢাকায় আসার বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি জানিয়েছেন।
গত বছরের জুলাইয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণা চালাতে মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম ড. শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইসিকে ঢাকা সফরে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছিল। এবার মদিনার ইমামকেও বাংলাদেশে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
মসজিদে নববীর প্রধান ইমাম আলী বিন আবদুর রহমান আল হুযাইফা ও মক্কার ইমামকে আনতে সরকারের স্বায়ত্বশাসিত একটি প্রতিষ্ঠান জোর তৎপরতা শুরু করেছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ নিয়ে একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই উদ্যোগে সম্পৃক্ত দায়িত্বশীলরাই এসব তথ্য জানিয়েছেন।
আগামী ২২ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের (ইফাবা) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিবসটিকে প্রতিবছরই জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদিনার মসজিদে নববীর ইমামকে আমন্ত্রণ জানাতে চান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল।
এ নিয়ে গত মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের নেতা শেখ আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
ইফাবা সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজনের চিন্তা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এবার সৌদি আরব থেকে দুই অতিথিকে উড়িয়ে আনার জোর চেষ্টাও চলছে।
বৈঠকের বিষয়ে শুক্রবার (৩ মার্চ) রাতে শেখ আবদুল্লাহ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর
সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। উনি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা চাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মক্কা-মদিনার ইমাম থাকবেন। তাদের দু’জনকে আনা সম্ভব না হলেও অন্তত একজন যেন উপস্থিত থাকেন, সেজন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
সূত্রের দাবি, গত বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসে গিয়ে দুই ইমামকে ঢাকায় আনতে প্রয়োজনীয় আলোচনা সেরে এসেছেন চার সদস্যের প্রতিনিধি। ওই প্রতিনিধি দলেও শেখ আবদুল্লাহ ছিলেন।
জানতে চাইলে ইফাবা মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ইসলামের প্রচার ও প্রসারের কাজে তারা নিবেদিত। তাদের মুখে ইসলামের কথা শুনতেই মক্কা-মদিনার ইমামকে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে। তবে এখনও দাওয়াতের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।’
শেখ আবদুল্লাহ জানান, সৌদি আরবের বাঙালি কমিউনিটির বিশিষ্ট কয়েকজনকে দিয়েও যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। এই চেষ্টা সফল হবে বলেই আশাবাদ জানান তিনি।
এদিকে, গত বছর জঙ্গি তৎপরতা ও বিভ্রান্ত মতাদর্শ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে মক্কার ইমাম ড. শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইসিকে আনতে চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ও জমিয়তুল উলামা। এ লক্ষ্যে ওই বছরের ২৬ মে তরিকতের একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরব যায়। প্রতিনিধি দলে দলটির মহাসচিব এম এ আউয়াল, প্রেসিডিয়ামের সদস্য সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, সৈয়দ মুতাওয়াক্কিল বিল্লাহ রাব্বানীসহ মোট ছয় জন ছিলেন।
আন্তর্জাতিক মানের একটি সম্মেলনের প্রধান আকর্ষণ করতেই সুদাইসিকে হাজির করতে চেয়েছিল দলটি। তাদের ওই চেষ্টা এখনও পর্যন্ত সফল হয়নি। এ বিষয়ে দলটির মহাসচিব এম এ আউয়াল বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।’
মসজিদুল হারামের ইমাম ড. সুদাইসিকে বাংলাদেশে আনার ব্যাপারে মত প্রকাশ করেছিলেন শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। গত বছরের জুলাইয়ের শুরুতে জঙ্গিবাদবিরোধী লাখো আলেমের ফতোয়া প্রকাশ অনুষ্ঠানে মক্কার ইমামকে বাংলাদেশে আনার ইচ্ছার কথা জানান তিনি। তার দাবি ছিল, মক্কার ইমামকে এনে ফতোয়া সম্পর্কে সবাইকে জানানো এবং বাংলাদেশের আলেম সমাজের মধ্যে এর কার্যকরী প্রভাব তৈরি করা।
ওই সময় মাওলানা মাসঊদ বলেছিলেন, ‘মক্কা শরিফের ইমাম রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। তাই তাকে বাংলাদেশে আনতে হলে বাদশাহর অনুমোদন লাগবে। বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে দাওয়াত দিতে হবে।’
যদিও শুক্রবার রাতে এ নিয়ে আলাপকালে মাওলানা মাসঊদ বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রাথমিক আলাপ হয়েছিল। মাঝখানে আমেরিকায় ছিলাম কিছুদিন। এখনও গ্রামের বাড়িতে আছি। ঢাকায় এসে জানাতে পারব।’
উল্লেখ্য, মসজিদুল হারামের ইমাম ড. সুদাইসি সুমধুর কোরআন তেলাওয়াতের জন্য গোটা মুসলিমবিশ্বে সুপরিচিত। পাশাপাশি গ্র্যান্ড মসজিদের ইমাম হিসেবে তিনি ইসলামের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান নিয়ে সারাবিশ্বেই উচ্চকিত কণ্ঠ।
অন্যদিকে, মসজিদে নববীর প্রধান ইমাম আলী বিন আবদুর রহমান আল হুযাইফা আরববিশ্বের একজন খ্যাতনামা ক্বারী।