অমিত বসু: মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মায়ের জন্ম স্কটল্যান্ডে। পিতার প্রথম আলো দেখা জার্মানিতে। ইউরোপের বাস গুটিয়ে ক্রমে আমেরিকায়। শরণার্থী হয়ে সম্পদ নির্মাণের স্বপ্ন। সাফল্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়কালে। আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্রপতি তিনি। সরকারি হিসেবে প্রথম ১১৩ বড়লোকের একজন। যাঁর নিজস্ব সম্পদ ৪৫০ কোটি ডলার। তাঁর বিরুদ্ধে ৩৫০০ মামলাও ঝুলে। যার অধিকাংশ জুয়াখেলা সংক্রান্ত। তিনি প্রথম আমেরিকার রাষ্ট্রপতি যিনি বিশাল জুয়াখানার মালিক। সবচেয়ে বেশি গলফ কোর্সের মালিক। তাঁর রিয়েল এস্টেটের বাণিজ্য আকাশ ছোঁয়া। হোটেলের কারবারের হিসেব রাখতে তিনি নিজেই জেরবার। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ব্যবসা দেখার সময় কই। হৃদয়ের খাঁচায় পোষাপাখির মতো ডাকছে পুরোন ইচ্ছে। খালি বলছে, আমেরিকা ফার্স্ট। সাদারা থাকবে শীর্ষে। কালোরা ধুলোয় গড়াগড়ি দেবে। তার পরিবার উদ্বাস্তু হলেও শ্বেতাঙ্গ। তিনি কালোদের ছাঁটবেন, সাদাদের রাখবেন। বর্ণবিদ্বেষের শক্তিতেই আমেরিকা মাথা তুলবে নতুন করে।
নির্বাচনের আগের প্রতিশ্রুতি পূরণে ট্রাম্প অবিচল। রাষ্ট্রপতি হয়েই তিনি বুঝিয়েছেন, যা বলেছেন তা করেই ছাড়বেন। কৃষ্ণাঙ্গ উদ্বাস্তুদের উচ্ছেদ
করাটাই হবে তাঁর প্রথম কাজ। যাদের আমেরিকায় বসবাসের বৈধ কাগজপত্র নেই তারা পার পাবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ছাড়তেই হবে। এমন মানুষের সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি। ট্রাম্প সবচেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক মেক্সিকানদের বিরুদ্ধে। আমেরিকা-মেক্সিকোর মাঝে তিনি পাঁচিল তোলার কাজ শুরু করেছেন। দু হাজার মাইল লম্বা সীমান্তে সূচাগ্র ফাঁক রাখতে চান না। এতে খরচ দু হাজার কোটি ডলার। যেটা ‘নাসা’র বার্ষিক বাজেটের থেকে বেশি। তিনি জানিয়েছেন, ডলারে আটকাবে না পরিকল্পনা। খরচটা মেক্সিকোর কাছ থেকে আদায়ের হুমকিও দিয়েছেন। আমেরিকায় মেক্সিকোর অভিবাসীরা বছরে ২৫০০ কোটি ডলার দেশে পাঠায়। সে অর্থ দেশে পাঠান বন্ধ হবে।
বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বাস করা আর অবৈধ কাজে যুক্ত থাকাটা এক কথা নয়। আমেরিকার ৩০ লাখ লোক অবৈধ কাজ করে। সে কাজে ড্রাগ থেকে অন্য পণ্যের চোরাই চালান আছে। মেক্সিকোর বসবাসকারীরা অবৈধ কাজ করে না। যথেষ্ট পরিশ্রম করে উপার্জনের সুযোগ পায়। মেক্সিকোর লোকেরা রান্না আর ঘরবাড়ি নির্মাণের কাজে পারদর্শী। সে কারণেই আমেরিকায় তাদের কদর। অবৈধ বসবাসকারী হওয়ার দরুণ অনেক কম মজুরিতে তাদের দিয়ে কাজ করান যায়। সেটাই করা হচ্ছে, যা এক ধরনের শোষণ। উল্টে আবার তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি।
বাংলাদেশি-ভারতীয়দের বেলাতেও এমনটা হচ্ছে। অবৈধ অভিবাসী হওয়ার অভিযোগে এক লাখ বাংলাদেশি, সাড়ে তিন লাখ ভারতীয়র মাথার উপর খাঁড়া ঝোলান হয়েছে। তাদের ভিসা না থাকলেও কেউ অবৈধ কাজ করে না। যথেষ্ট পরিশ্রম করে অর্থ দেশে পাঠায়। আমেরিকায় সংসার চালাতেও খরচ আছে। যারা বৈধ ভাবে আমেরিকায় আছে তারাই বা কত দিন থাকতে পারবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। চাপটা বেশি নিউইয়র্কে। ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, শিকাগো, জর্জিয়া, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়ায় বিদেশি বিতাড়নের পর্ব শুরু হয়েছে। আমেরিকার সব রাজ্যের নিজস্ব সংবিধান আছে। রাজ্য কোন পথে চলবে, রাজ্যের আইনসভা সেটা ঠিক করে। আদালতের হাতেও যথেষ্ট ক্ষমতা। ট্রাম্প আইন আদালতকে টপকে একা এগোতে পারবেন না। তাঁকে রুখতে রাষ্ট্রসংঘের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তিনি যেটা করছেন সেটা অমানবিক। বর্ণ বিদ্বেষের নামান্তর। ইউরোপটা ছাড়া আর কাউকে পছন্দ নয় ট্রাম্পের। তাঁর স্বভাব নিজের দেশের লোকেদেরও যে পছন্দ নয় সেটা ট্রাম্পের বোঝা উচিত। ট্রাম্পের অনৈতিক, অমানবিক নীতির বিরুদ্ধে প্রতি দিন বিক্ষোভ আন্দোলন আছড়ে পড়ছে আমেরিকার রাস্তায়, রাজপথে।-আনন্দবাজার