রাজিব আহমদ বাড়ী শহরতলীর টুকেরবাজার এলাকায়। সম্প্রতি দালালের মাধ্যমে স্বপ্নের দেশ ইতালি যাওয়ার জন্য লিবিয়াতে যান। সেখানে গিয়ে পড়েন মানব পাচার চক্রের হাতে। চক্রটি তাকে একটি রুমে আটক রেখে দেশ থেকে টাকা নিতে বলে। অন্যথায় পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে দেশে পঠিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। সঙ্গের অন্য বন্দিদের উপর নির্যাতন করা হয়। পওে দেশ থেকে টাকা নিয়ে তবেই মুক্তি পান তিনি। এমনটাই জানান দেশে থাকা রাজিবের ভাই মারুফ। এভাবে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মানব পাচারচক্রের হাতে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন অনেকেই। কেউ – কেউ মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে পৌছেঁ যাচ্ছেন ইতালিতে। ট্রলারে করে যাওয়ার পথে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
গত ২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট লিবিয়ার জোয়ারা উপকূলে অন্য দুটি ট্রলারডুবিতে ২৪ জন বাংলাদেশিসহ ১১৮ জনের মৃত্যু হয়, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এর মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক ও সিরিয়ার নাগরিকদের পাশাপাশি মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে লিবিয়ায় থাকা কিছু সংখ্যক বাংলাদেশির ইতালির পথে পাড়ি দেওয়ার ঘটনা আলোচনায় আসে। বেশির ভাগ বাংলাদেশি দালালদের মাধ্যমে নেপাল-শ্রীলংকা-তুরস্ক হয়ে লিবিয়াতে প্রবেশ করছেন। কারণ বাংলাদেশ থেকে বৈধ ভাবে বর্তমানে লিবিয়াতে প্রবশের কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সিলেটের জনশক্তি ও কর্মসংস্থান অফিসের জনশক্তি জরীপ কর্মকর্তা মো মাহবুবুল হাসান। যার ফলে, অনেক বাংলাদেশি বিপদে পড়ে দূতাবাসের আশ্রয় চাইতে পারেন না।
কারণ তাদের কাছে তখন বাংলাদেশের পাসপোর্টও থাকে না। দালালচক্র প্রথমেই তাদের পাসর্পোট নিয়ে নেয়।সম্প্রতি দালালদের মাধ্যমে লিবিয়ায় পৌছেঁন বিয়ানীবাজারের জাকির হোসেন। তিনি লিবিয়া থেকে জানান, ‘অনেকেই ট্রলারে করে লিবিয়া থেকে ইউরোপে চলে যাচ্ছে। দালালরা টাকার বিনিময়ে ট্রলারে করে ইতালির জল সীমায় ছেড়ে দেয়। সেখান থেকে ইতালিয় কোস্টর্গাডরা উদ্ধার করে বন্দিশিবিরে নিয়ে যায় বলে জানান তিনি। তিনি জানান, বর্তমানে তার সাথে বেশ কিছু বাংলাদেশি ও সিলেটী রয়েছেন, যারা ইতালিতে প্রবেশের চেষ্টা করছেন।
গত জানুয়ারিতে এভাবেই ইতালিতে পৌঁছেন বিয়ানীবাজারের শেওলা এলাকার সাইদুল ইসলাম। তিনি বন্দি শিবির থেকে মুঠোফোনে জানান, ইতালিতে যাওয়ার জন্য বেনগাজি থেকে তাঁদেরকে বাসে করে ত্রিপোলি আনা হয়। সেখান থেকে জোয়ারা। সাধারণত এক হাজার লিবীয় দিনার দিলেই দালালেরা ট্রলারে তোলে। কিন্তু তাঁরা বাংলাদেশি দালালকে ১ হাজার ৩০০ দিনার দেন, যাতে ট্রলারের পাটাতনে না রেখে তাঁদের ওপরে রাখা হয়। কারণ পাটাতনের নিচে ইঞ্জিনের কাছে রাখলে বেশির ভাগই মারা যায়।
তিনি জানান, সিলেটে বেশ কিছু আন্তজাতিক মানব পাচারচক্রের সদস্য রয়েছে। তারা লিবিয়াতে বন্দি লোকজনের আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নেয়। এরপর বন্দিদেও ছেড়ে দেয়া হয়। দালালেরা লিবিয়াতে বন্দিদের আটক করে পিস্তলের ভয় দেখায়। যারা কথামত চলে না তাদের মারধরও করে বলে জানান সাইদুল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেটের জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মীর কামরুল হোসেন বলেন, এ সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে আমরা প্রায়ই বিভিন্ন জনের কাছ থেকে এমন খবর শুনি। কারণ বৈধভাবে এখন লিবিয়াতে বাংলাদেশিদের প্রবেশের সুযো নেই। তবে এটি সত্যি, সাম্প্রতিক সময়ে এভাবে অনেক বাংলাদেশি লিবিয়া থেকে ইতালি যাচ্ছেন।’
বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার লিবিয়া। তবে ২০১১ সালে দেশটিতে যুদ্ধাবস্থা শুরুর পর ৩৬ হাজার বাংলাদেশি ফিরে আসেন। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সেখানে এখন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার বাংলাদেশি আছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থার কারণে ও ভাগ্য বদলাতে অনেকেই এখন ইতালির পথে রওনা হচ্ছেন।