খালেদা জিয়াসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল

কুমিল্লা প্রতিনিধি:

কুমিল্লার বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়াসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। ৬ মার্চ সোমবার দুপুরে চৌদ্দগ্রাম কোর্টের তদন্ত কর্মকর্তা মো. ইব্রাহীম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সূত্রমতে জানা যায়- বিএনপি আহুত অবরোধের সময় পেট্টোল বোমায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুরে যাত্রীবাহী বাসের ৮ ঘুমন্ত যাত্রীকে পুড়িয়ে মারার ঘটনার বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, এম কে আনোয়ার, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ এবং মামলার প্রধান আসামী জামায়াতের সাবেক সংসদ সংসদ ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো: তাহেরের বিরুদ্ধে সোমবার চার্জসীট দিতে পারে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো: ইব্রাহিম রবিবার চার্জসীট দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি জানিয়েছেন আজকালের মধ্যে চার্জসীট দেওয়া হবে। মামলায় এজহার নামীয় আসামী ছাড়াও বিবরণে উল্লেখ থাকা হুকুমের আসামী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নামে চার্জসীট দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

অপর দিকে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মামলায় এজহারে নাম না থাকলেও বিএনপির উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীর নাম থাকতে পারে। বহুল আলোচিত এ মামলায় প্রধান আসামী জামায়াতের সাবেক সংসদ সংসদ ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো: তাহেরসহ ৫৬ জনের নাম রয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত ১২ জনসহ ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় সম্পৃক্ত ৩ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৫ এর ৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপি আহুত অবরোধ চলাকালে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় (মঙ্গলবার ভোর) ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের জগমোহনপুরে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের (ঢাকা মেট্টো ব ১৪-৪০৮০) একটি বাসে দুর্বৃত্তরা পেট্টোল বোমা নিক্ষেপ করে । এতে মুহুর্তের মধ্যে বাসটিতে আগুন ধরে যায়।

খবর পেয়ে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। বাসের কয়েকযাত্রী জানালা দিয়ে লাফিয়ে প্রাণে বাচঁতে পারলেও ততক্ষনে দগ্ধ হয়ে যায় অন্তত ২০ যাত্রী। এদের মধ্যে ৭ যাত্রী ঘটনাস্থলে দগ্ধ হয়ে নিহত হন এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। দগ্ধ হন আরো ১২ যাত্রী। ঐ বাসের যাত্রীদের বেশিরভাগই ঘুমিয়ে ছিলেন।

নৈশ বাস হওয়ায় বাসের দরজাও ছিল তালা বদ্ধ। নিহতরা হলেন যশোহর ৩৫ কবি গোলাম মোস্তফা সড়ক ঘোষ সেন্ট্রাল রোডের নুরুজ্জামান পভলু, তার মেয়ে মাইশা তাসমিন, (১৪), কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার গাইনাকাটা গ্রামের মৃত ছিদ্দিক আহম্মদের পুত্র আবু তাহের (৩৮) ও একই গ্রামের সালেহ আহম্মদের পুত্র আবু ইউসুফ (৪৫), নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বালুরচর পাড়ার জসিম উদ্দিন মানিকের স্ত্রী আসমা আক্তার (৩৮) ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শান্ত (১৩) এবং শরীয়তপুর জেলার ঘোষেরহাট থানার দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামের মৃত নজরখার পুত্র ওয়াসিম। নিহতদের মধ্যে ওয়াসিম ব্যতিত বাকি ৭ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ ঘটনার দিন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামী করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, এম কে আনোয়ার, উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ ছাড়াও জামায়াতের সাবেক সংসদ সংসদ ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো: তাহেরসহ ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৫/২০ জনের
বিরুদ্ধে ২টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদি হয়েছেন এসআই নরুজ্জামান হাওলাদার । দুটি মামলাতেই একই আসামী।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের নৈশবাসে বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি কর্মী আলমগীর হোসেনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উন্মোচিত হয়েছে ঘটনার সব তথ্য ও জড়িতদের নাম। গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি কর্মী আলমগীর হোসেনের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন জড়িতের সবাই বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত।

এর মধ্যে নৈশবাসে বোমা হামলাকারী মো: সোহেলের লাশ পাওয়া গেছে কুমিল্লা দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সে চৌদ্দগ্রামের মিয়ারবাজারের জগমোহনপুরের বাবুল মিয়ার ছেলে। কুমিল্লার চান্দিনা বাজার থেকে সাদা পোষাকের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল বলে গুঞ্জন ছিল। এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার শামুকসার এলাকায় পুলিশের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা শিবিরের সভাপতি সাহাব উদ্দিন পাটোয়ারী নিহত হন। নিহত সাহাব উদ্দিন পাটোয়ারী চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার চাঁন্দিশ করা গ্রামের মাও. জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারীর ছেলে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও পেট্টলবোমা উদ্ধার করেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো: ইব্রাহিম নিশ্চিত করে বলেছিলেন ‘নিহত সোহেল পেট্টল বোমাটি ছুড়ে মারে এমন কথাই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আছে। প্রথমে ১২ জন ও পরে মুখোশ পরে আরো অনেকে এই ঘটনায় অংশ নেন। তাদের আরো বড় ধরনের পরিকল্পনা ছিল।’ গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি কর্মী আলমগীর হোসেন কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৫ নং আমলী আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আ স ম শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল।

দেশব্যাপী বহুল আলোচিত এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর নিহতদের মধ্যে ওই সময় একজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় এবং অপর সাতজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত না করেই তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু ময়নাতদন্ত ছাড়া মামলার বিচারের প্রক্রিয়ায় পরবর্তীতে জটিলতা দেখা দেয়ার আশঙ্কায় পরে আদালতের নির্দেশে পুলিশ কক্সবাজারের ইউসুফ ও রাশেদুল ইসলামের মরদেহ ওই বছরের ২১ নভেম্বর, যশোরের নুরুজ্জামান পপলু ও তার মেয়ে মাইশার মরদেহ গত বছরের ২১ জানুয়ারি, শরীয়তপুরের ওয়াসিমের মরদেহ ২ ফেব্রুয়ারি এবং নরসিংদীর আসমা ও শান্তর মরদেহ ১ মার্চ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইব্রাহীম জানান, ঘটনার দিনের ৭ নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত না করায় পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে মরদেহ উত্তোলন করতে গিয়ে মামলার তদন্তে কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছে, তবে এরই মধ্যে নিহতদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে তথ্যভিত্তিক যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

Check Also

গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ প্রকাশ নয়, চূড়ান্ত শুনানি ১১ ফেব্রুয়ারি

সংবাদবিডি ডেস্ক ঃ মাতৃগর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ রোধে নীতিমালা বা নির্দেশনা তৈরি করতে বিবাদীদের …