আবারও ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়মে বাঁধুন ব্যাংকিং খাত

সোনালী ব্যাংক আবারও একটি বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটিয়েছে। এটি ঘটেছে নারায়ণগঞ্জের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখায়। এ শাখার কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ৫৮টি গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ‘ব্যাক টু ব্যাক’ এলসি তথা ঋণপত্র খুলে একটি চক্র প্রায় ৬১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। আশ্চর্যের বিষয় হল, শাখাটি উল্লিখিত ঋণ জালিয়াতির দায় নিজের কাঁধে নিয়ে ইতিমধ্যে তা অবলোপন করেছে, যা এখন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হিসেবে দেখানো হবে। সাধারণত মূলধন ঘাটতির টাকা সরকার ভর্তুকি হিসেবে জোগান দিয়ে থাকে। ধরে নেয়া যায়, এ ক্ষতিও সরকারের পক্ষ থেকে পুষিয়ে দেয়া হবে। তবে প্রশ্ন হল, জনগণের করের টাকায় বছরের পর বছর ধরে এভাবে দুর্নীতির দায় বহন করা কতটা যৌক্তিক? সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে সরকার এ বছরও ৩শ’ কোটি টাকার জোগান দিয়েছে, যার পুরোটাই জনগণের করের টাকা। কেবল সোনালী ব্যাংক নয়, দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে বিভিন্ন চক্র অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকেও হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে, অথচ তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে ব্যাংক লুটপাট বন্ধ হচ্ছে না। বস্তুত বিচারহীনতার কারণেই বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এর আগে সোনালী ব্যাংকের ‘হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারি’তে প্রভাবশালী চক্র অন্তত সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। লুটপাটের ঘটনায় ব্যাংকের শাখা পর্যায়ে কারও কারও শাস্তি হলেও মূল হোতারা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে, যা দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য অশনি সংকেত।

ব্যাংকগুলোর দেয়া ঋণ যাতে কুঋণে পরিণত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি। একইসঙ্গে ব্যাংকিং খাতে অসৎ কর্মকর্তাদের দাপট ও আধিপত্য রোধের বিষয়েও নজর দেয়া উচিত। দেখা গেছে, অসৎ ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি খেলাপি ঋণের প্রসার ঘটায়। মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ নেয়ার পর তা খেলাপি ঋণে পরিণত করার প্রবণতা শুরুতেই রোধ করা গেলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না বলেই আমাদের বিশ্বাস। বলতেই হবে, ব্যাংকিং খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি বলেই বেসিক ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক একের পর এক ঋণ কেলেঙ্কারির জন্ম দিচ্ছে। সোনালী ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ বৈদেশিক বাণিজ্য শাখায় ‘ব্যাক টু ব্যাক এলসি’ বা ঋণপত্র খোলা হলেও এর বিপরীতে বিদেশ থেকে কোনো কাঁচামালই আমদানি করা হয়নি। এটি সত্য হলে, এক্ষেত্রে অর্থ পাচারের মতো একটি বড় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবৈধ আর্থিক প্রবাহ বা মুদ্রা পাচার নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণকারী ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা জিএফআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ৫ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এ তথ্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। একদিকে দেশের ব্যাংকিং খাতে ভয়াবহ নৈরাজ্য বিরাজ করছে, অন্যদিকে পাচারকারীদের বিদেশের ব্যাংক-হিসাব স্ফীত হচ্ছে বাংলাদেশের টাকায়, যা মেনে নেয়া কষ্টকর। সময়ের প্রয়োজনে বিস্তৃত হচ্ছে দেশের ব্যাংকিং খাত। ব্যাংকিং খাতকে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হলে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুুক্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য বিরাজমান দুর্নীতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটানো জরুরি। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা না গেলে অর্থ লুটপাটের ঘটনা ক্রমশ বাড়বে, যা মোটেই কাম্য নয়।

Check Also

বিদেশে নয় দেশের মাটিতেই বিয়ের পরিকল্পনা রকুল-জ্যাকির

সংবাদবিডি ডেস্ক ঃ রকুল প্রীত সিং ও জ্যাকি ভাগনানির বিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি। বিয়ের প্রস্তুতি এখন …