অনলাইন ডেস্ক: জেলার সদর উপজেলা নিয়ে রংপুর-৩ আসন ভাসছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জোয়ারে।
শুধু তাই নয়, গোটা রংপুরেই জাতীয় পার্টির একচ্ছত্র আধিপত্য। বিশেষ করে দলের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ রংপুরের সন্তান হওয়ায় এলাকায় জাতীয় পার্টির আলাদা প্রভাব রয়েছে।

’৮৬ সালের পর জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য দলের প্রার্থী এমপি হতে পারেননি, বিশেষ করে রংপুর-৩ সদর আসনে। আর প্রতিপক্ষ বলতে আওয়ামী লীগের একটা অবস্থান থাকলেও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মতো হাইপ্রোফাইল প্রার্থীর জনপ্রিয়তার ধারেকাছেও নেই কেউ।

বিএনপি আগে থেকেই সাংগঠনিকভাবে দুর্বল এ আসনে। তাছাড়া কোনো নির্বাচনী লড়াইয়েই বিএনপি নিজেকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে পারেনি। ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ জেলে থেকেই রংপুরের পাঁচটি আসনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। পরে সদর আসন রেখে বাকিগুলো তিনি ছেড়ে দেন।

আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনেও এরশাদ রংপুর-৩ আসনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। চেয়ারম্যান এরশাদ নিজেও রংপুরের একাধিক সমাবেশে আগামী নির্বাচনে সদর আসন থেকে তাকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বামদলগুলোর অবস্থাও সদরে ভালো নয়। জামায়াত কিংবা ধর্মভিক্তিক দলগুলোর চোখে পড়ার মতো তৎপরতা নেই। সব মিলিয়ে আগামী নির্বাচন জোট বা মহাজোটগতভাবে হোক আর না হোক রংপুর-৩ আসনটি জাতীয় পার্টির দখলেই থাকবে।

এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাফ ডজনেরও বেশি সম্ভাব্য প্রার্থী প্রস্তুতি নিলেও বলার মতো কোনো প্রার্থী মাঠে নেই।

নব্বইয়ে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর অনেকেই ভেবেছিলেন রংপুরের মানুষও বদলে যাবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে রংপুরবাসী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পেছনে আরও বেশি একাট্টা। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যাবে কী যাবে না সে চিন্তা না করেই ভোটাররা লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।

আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা হয় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্য এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার সঙ্গে। তিনি  বলেন, এরশাদ রংপুরের মাটি ও মানুষের সন্তান। তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তিনি দেশের জাতীয় নেতা, তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের অনেক উন্নয়ন করেছেন। তিনি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করেছেন। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে তাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর চেষ্টা হয়েছিল। তিনি রংপুরের মানুষের ভালোবাসায় পুনর্জন্ম লাভ করেছেন। রংপুরের মানুষের কাছে তার অনেক ঋণ। আগামীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে রংপুরের মানুষের সে ঋণ শোধ করতে চান। তাই রংপুরের মানুষ মনে করে এরশাদ রংপুরের মানুষের নেতা। তাকে সাধারণ জনগণ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা জয়যুক্ত করবেন। যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন ততদিন তাকে রংপুরের মানুষ নির্বাচিত করবেন।

দলের মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির বলেন, এরশাদ শুধু রংপুরের মানুষের নেতা নন, তিনি সারা দেশের মানুষের নেতা। তিনি তার রাজনৈতিক দর্শন ও প্রজ্ঞা দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার সময় বিশেষ করে রংপুরের যত উন্নয়ন করেছেন আর কোনো সরকারের আমলে তা হয়নি। তাই রংপুরের মানুষ তাকে নেতা মনে করেন। তাকেই ভোটে জয়যুক্ত করবেন।

গণতন্ত্রের স্বার্থে এবং দেশবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তাকে কোনোরকম হয়রানি না করার কথা ছিল। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তরের পর সাবেক এই রাষ্ট্রপতিকে গ্রেফতার করা হয়।

এরশাদের প্রতি তৎকালীন সরকারের এ আচরণ মেনে নিতে পারেনি রংপুরের মানুষ। ফলে জেলে বন্দি থাকা অবস্থায়ই তিনি রংপুরের ৫টি আসনে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। পরের নির্বাচনগুলোতেও এরশাদ রংপুর সদরসহ একাধিক আসনে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন।

প্রতিবারই তিনি রংপুর সদর রেখে বাকিগুলো ছেড়ে দেন। তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা কিছুটা কমেছে। দলের চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে ঢাকায় থাকতে হচ্ছে। তবে প্রায়ই তিনি ছুটে যান এলাকায়। মানুষের সঙ্গে নানা ইসু্যুতে মতবিনিময় করছেন। সবকিছুর পরও রংপুর-৩ আসনে এরশাদের ধারেকাছেও কেউ নেই।

বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা তুলনামূলক বিচারে অনেকটা দুর্বল হওয়ায় বিকল্প হিসেবে রংপুরে আওয়ামী লীগকে ভাবা হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অন্তত তিনজন প্রার্থী মাঠে। তারা হচ্ছেন- জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া (সংরক্ষিত মহিলা এমপি), জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম এবং কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা কমিটির সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান।

আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রংপুরের উন্নয়নের প্রায় সবটাই হয়েছে শেখ হাসিনার শাসনামলে। রংপুর বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্র, দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেরিন একাডেমি, রংপুর ফোর লেন সড়ক, রংপুর বাইপাস সড়ক, বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজি অফিস ভবন, মেট্রোপলিটন পুলিশ, মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্থাপনসহ রংপুরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বর্তমান সরকার আমলে। রংপুরে এখন বইছে বদলে যাওয়ার হাওয়া। উন্নয়নের বিচারে এখানে আওয়ামী লীগের বিকল্প কোনো রাজনৈতিক শক্তি নেই। তাই আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলে জাপার এই শক্ত ঘাঁটি ভেঙে চুরমার হতে পারে।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বলেছেন, তিনি রংপুরের উন্নয়নে কাজ করছেন। মানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। এসব কারণেই জনগণ তার সঙ্গে রয়েছে। তিনি দলের মনোনয়ন প্রার্থী।

অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, এ আসনে এরশাদ বারবার নির্বাচিত হয়ে আসছেন। কিন্তু তিনি এলাকায় থাকেন না। এতে উন্নয়ন পিছিয়ে পড়ছে।

দীর্ঘদিনের এই শূন্যতা পূরণে সরকারি দলের একজন এমপি থাকা দরকার। জাতীয় পার্টির সঙ্গে মহাজোট হলেও দলীয় প্রতীকে তিনি নির্বাচন করবেন বলে জানান।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন সংগঠনের রংপুর মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু, মহানগর কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেন ও সহসভাপতি কাওছার জামান বাবলা।

সরকারের দমনপীড়নে চাপের মুখে থাকা বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলছেন, আগামী নির্বাচনে দল অংশ নিয়ে তারা জয়ের জন্য মাঠে নামবেন।

নির্বাচনে বিএনপির প্রস্তুতি নিয়ে কথা হয় রংপুর সিটি নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থী ও মহানগর কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাদের পক্ষে ব্যক্তি নয় দলের মার্কাই প্রধান। যাকেই দল মনোনয়ন দেবে ‘ধানের’ শীষ মার্কা দেখেই জনগণ ভোট দেবে। দলীয় নেতাকর্মীরা কাজ করবে। কিন্তু লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কোথায়? নেতাকর্মীরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না। মামলা আর গ্রেফতার আতঙ্কে সবাই বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবুও আমরা মাঠ দখলের লড়াই করছি।

বিএনপির মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড এখনও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কোনো সবুজ সংকেত দেয়নি। সবকিছুই অনিশ্চয়তার মাঝে আছে। তাই তারা নিজেরাও নিশ্চিত নন কে হবেন দলের সংসদ সদস্য প্রার্থী।

জানতে চাইলে শহিদুল ইসলাম মিজু বলেছেন, দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবেন। তাছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রও তৈরি হওয়া দরকার। স্থানীয় ভোটারদের অভিমত, বিএনপি কয়েক দফা ক্ষমতায় থাকলে রংপুরের জন্য কিছুই করেনি। বরং রংপুরের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি শিক্ষা বোর্ডকে সরিয়ে দিনাজপুরে দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নামে টালবাহানা করতে করতে অবশেষে সেটিও দিনাজপুরে করেছেন।

Check Also

বিদেশে নয় দেশের মাটিতেই বিয়ের পরিকল্পনা রকুল-জ্যাকির

সংবাদবিডি ডেস্ক ঃ রকুল প্রীত সিং ও জ্যাকি ভাগনানির বিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি। বিয়ের প্রস্তুতি এখন …